রাস্তা তৈরি করার জন্য কেঁটে ফেলা হচ্ছে গাছ। —ফাইল চিত্র।
বালাসন থেকে সেবক সেনা ছাউনি পর্যন্ত একটি ‘এলিভেটেড রোড’ তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। গত সপ্তাহেই সেবক সেনা ছাউনি থেকে সেবক পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত তেমনই আরও একটি রাস্তা তৈরি করার জন্য কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুমোদনও দিয়েছে। সাম্প্রতিক প্রস্তাবিত রাস্তাটি পুরোপুরি মহানন্দা অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কথা। এই অভয়ারণ্যে একাধিক বিপন্ন প্রাণীর বসবাস এবং যাতায়াতের করিডর। এই এলাকায় বন্যপ্রাণ আগে থেকেই নানা কারণে বিপদের মুখে রয়েছে।
উন্নয়ন করতে গেলে কিছু গাছ কাটতে হবে, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু শুধু গাছ কাটা ছাড়াও বন্যপ্রাণ এবং এলাকার জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের যতটা কম ক্ষতি হয়, তার আরও দিক রয়েছে। যার কোনও সঠিক পরিকল্পনা আমরা আগের প্রকল্পের সময় দেখতে পাইনি। ওই পদ্ধতি মানতে গেলে প্রথমে যে এলাকায় রাস্তা তৈরি হবে, তার একটি যৌথ সমীক্ষা রাজ্য বন দফতর এবং কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের করার কথা। ওই সমীক্ষায় কতগুলি গাছ কাটা পড়তে পারে, তার একটি হিসেব কষে তা রাজ্য সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে যাওয়ার কথা। তারা ছাড়পত্র দিলে কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রক গাছ কাটার ফলে হওয়া সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণে বনসৃজনের টাকা রাজ্য সরকারকে দেবে। তবেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।
উত্তরবঙ্গে গত কয়েক বছরে যতগুলি রাস্তার প্রকল্প হয়েছে, তার জন্য অন্তত ৪০ হাজার পরিণত গাছ কাটা পড়েছে। কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণের টাকায় বনসৃজন করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে অনেক অনেক দূরে। তার জেরে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র কোনও দিনই আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এলাকার উন্নয়ন হবে। সেনার প্রয়োজনে পরিকাঠামোও তৈরি করতে হবে। সেটা যেমন বাস্তব, তেমনই উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে, তা-ও বাঁচাতে হবে। স্থানীয় দাবি, আবেগে আঘাত করে কোনও উন্নয়নের কাজ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
অভয়ারণ্যের ভিতর দিয়ে রাস্তাটি গেলে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে, তার সম্ভাব্য সমীক্ষা এবং ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্ধারিত হওয়ার পরে স্থানীয় এলাকাতেই বনসৃজন এবং পরিবেশ রক্ষার পরিকল্পনা করে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা দরকার। এ বিষয়ে সঠিক এবং যথাযথ পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনে পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে এগোনো যেতে পারে। হিমালয়ের কোলে সংবেদনশীল এলাকায় উন্নয়নে পরিবেশের উপরে প্রভাব যতটা পুষিয়ে দেওয়া যায়, এ তল্লাটের মানুষের ক্ষেত্রে তা ততই মঙ্গলজনক। যে টাকার অনুমোদন মিলেছে, আশা করা যায়, ওই কাজের জন্য তার বড় অংশ রাখা থাকবে।