হাতে আর একদিন। অথচ কোচবিহারে প্রায় অর্ধেক আসনে বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। সোমবার মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে শেষ পর্যন্ত আদৌ পুরোপুরি লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আগে থেকেই করা হচ্ছিল। সেটা যে বাস্তবেও সঠিক তাও মনোনয়নের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। সন্ত্রাসের জন্য প্রার্থী থাকলেও বহু আসনে মনোনয়নপত্র জমা করা সম্ভব হয়নি। তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, অভিযোগ ভিত্তিহীন। জেলায় বিরোধীদের সাংগঠনিক কোনও রকম ভিতই নেই।
গত সোমবার থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল পর্ব শুরু হয়। প্রথম দফায় জেলার ১২টি ব্লকের বিডিও অফিসে ওই কাজ চলে। শনিবার মহকুমা শাসকের দফতরেও মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী কোচবিহারে এখনও পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের জন্য ৪১৩৬টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। তৃণমূল দিয়েছে ২৫৩৬টি, বিজেপি ৯৩৫টি, সিপিএম ১৯৬টি, সিপিআই ২২টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ৮৫টি, আরএসপি ২টি। কংগ্রেস ও অন্যান্যরা ৬১টি করে মনোনয়ন জমা করেছে। নির্দলের ২৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। জেলায় ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন সংখ্যা ১৯৬৬টি। জেলার ১২টি পঞ্চায়েত সমিতিতে আসন সংখ্যা ৩৬৬টি। তৃণমূল ৪৮২টি, বিজেপি ১৯৪টি, সিপিএম ৫৮টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ১৭টি, কংগ্রেস ১৭টি, অন্যরা ২৩টি ও নির্দলের ৪১টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। জেলা পরিষদের ৩৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ১১৫ টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। তার মধ্যে তৃণমূল ৩৮টি, বিজেপি ১৯টিতে মনোনয়ন জমা করেছে। বামেরা করেছে ২০টি। সিপিএম ১৭টি, ফব ৩টি। কংগ্রেস ৮টি, নির্দলরা ৬টি, অন্যরা দিয়েছে ২৪টি। কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “সুষ্ঠ ভাবেই মনোনয়ন জমা নেওয়ার কাজ চলছে।”
বিরোধীরা অবশ্য সন্ত্রাসের অভিযোগ ইস্যুতে এক সুরে সরব। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “জেলায় তৃণমূলের চরম সন্ত্রাস চলছে। শতাধিক কর্মী বাড়ি ছাড়া। তাই অনেক বেশি প্রার্থী থাকলেও সবার মনোনয়ন জমা করা যায়নি। সোমবার ঝাঁপিয়ে পড়ব।”
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, “অনেক জায়গাতেই আমাদের প্রস্তাবকদেরও হুমকি দেওয়া হয়। শাসকের সন্ত্রাসের মধ্যে যতটা বেশি মনোনয়ন জমার চেষ্টা হচ্ছে।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরীও বলেন, “অনেকের পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সারা বছর ধরেই আমাদের সাংগঠনিক কাজ হয়। সব আসনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি ছিল। নিছক অপপ্রচার করাটাই বরাবর বিরোধীদের স্বভাব।”
সব মিলিয়ে মনোনয়ন দাখিলের পরিসংখ্যানে তিন স্তরেই কোচবিহারে এগিয়ে তৃণমূল। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধী শিবিরের মধ্যে বামেদের পেছনে ফেলেছে বিজেপি। জেলা পরিষদে মনোনয়ন দাখিলে অবশ্য বিজেপির চেয়ে বামেরা খানিকটা এগিয়ে। প্রসঙ্গত, মনোনয়নপত্র জমা ঘিরে দিনহাটা, মাথাভাঙা, কোচবিহার সদর, তুফানগঞ্জেও মহকুমাতে ব্যাপক গোলমাল হয়েছে।