জল-টপকে: বৃষ্টিতে জল জমে গিয়েছে রাস্তায়। আলিপুরদুয়ারে তাই টপকেই চলল মিছিল। ছবি: নারায়ণ দে
নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। তাতে শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টি। কিন্তু ভোটও এগিয়ে এসেছে। তাই নিম্নচাপের বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই প্রার্তীরা ঝাঁপালেন প্রচারে। দরকারে কখনও ছাতা, কখনও রেনকোট বেরিয়েছে। কখনও কেউ আশ্রয় নিয়েছেন কারও বাড়িতে। অনেকে ঘরে ঘরে ছোট ছোট মিটিং সেরে নিয়েছেন। অনেক প্রার্থীই তাতে কুশি। আলিপুরদুয়ারের এক প্রার্থীর যেমন বক্তব্য, ‘‘বৃষ্টি হবে জানতাম। তাই দলের এক সমর্থকের বাড়ির একতলাতেই প্রচার সভা করেছি। খুবই কাজে দিয়েছে।’’ কোচবিহারের এক প্রার্থীর কথায়, ‘‘বৃষ্টিতে গ্রামের লোকও বেরোতে পারেননি। তাই আমি যখন এলাকার একটি বড় চায়ের দোকানে বৈঠক করলাম, বহু লোকই এসেছিলেন।’’
তবে সকালের দিকে ভোট প্রচার বন্ধ ছিল অনেক প্রার্থীরই। কারণ, তখন অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। বেলা গড়াতেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। তারপরেই প্রচারে ঝাঁজ বাড়ান প্রার্থীরা।
আলিপুরদুয়ারে সকাল থেকে থেকে ছিল আকাশের মুখ ভার। সকাল ন’টা নাগাদ বৃষ্টি শুরু হয় আলিপুরদুয়ার শহর ও সংলগ্নে এলাকায়। বৃষ্টি দেখে মুখ ভার হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের। দুপুর দেড়টা নাগাদ বৃষ্টি কমতেই বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীরা বেরিয়ে পড়েন কাজে। চেচখাতা এলাকায় তৃণমূল সমর্থকদের দেখা যায় ব্যানার ফেস্টুন লাগাতেও। বিজেপি কর্মীরাও শালকুমার হাটে পতাকা লাগানো ঘুরে ঘুরে। এক বিজেপি কর্মী জানান, যে ভাবে মেঘলা আবহাওয়া হয়েছে তাতে প্রচারে সমস্যা হবে।
বালুরঘাটে সকাল ৬টা থেকে অঝোরে বৃষ্টি নামে। সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকায় শীতের আবহ তৈরি হয়ে যায়। চাদর হাফ সোয়েটারও অনেকের গায়ে ওঠে। একে ছুটির দিন। তার উপর বালুরঘাটের বাজারে সস্তার ইলিশ মিলছে খবর পেয়ে অনেকে ছাতা মাথায় ছোটেন তহবাজারে। তাতে শাসক থেকে বিরোধী প্রার্থীর হেঁসেল থেকেও এদিন ইলিশ ভাজার গন্ধ পাওয়া যায়।
রবিবাসরীয় প্রচারে তৃণমূল এবং বিজেপি কামারপাড় হাট প্রচার ও হাট মিছিলের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছিল। কামারপাড়া এলাকায় তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র, সাংসদ অর্পিতা ঘোষের প্রচারে যায়ার কথা ছিল। বৃষ্টির জন্য তাদের ওই কর্মসূচি বাতিল হয়। বিজেপির হাটমিছিলও হয়নি। ফলে এদিন উভয় দলের জেলা নেতৃত্ব হিলি, কামারপাড়ায় প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন। এদিন ফের বৃষ্টিতে দিনের প্রথম বেলাটা পন্ড হয়ে যায়। সেই সুযোগে দাম কম পেয়ে ইলিশ কেনেন শহরবাসীর পাশাপাশি অনেক প্রার্থী। তৃণমূলের বালুরঘাট জেলাপরিষদ প্রার্থী প্রবীর রায় কিংবা বিজেপি প্রার্থী বাপি ঘোষ বরাবরই ইলিশ পছন্দ করেন। তবে বালুরঘাটে বাম নেতা বিশ্বনাথ চৌধুরী অবশ্য বৃষ্টির জন্য বাজারে যেতে পারেননি। বাড়ির কাছে জ্যান্ত ট্যাংরা মাছ পেয়ে মধ্যাহ্নভোজন সারেন।
দুপুরের পর বৃষ্টি কমতেই তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ ও জেলাসভাপতি বিপ্লব মিত্র কর্মী বৈঠকে গঙ্গারামপুর থেকে হিলি ছোটেন। বিপ্লববাবু বলেন, সকালের দিকে বৃষ্টি হলেও বাড়িতে বসে ফোনে নেতা কর্মীদের সঙ্গে মনিটরিংয়ে ব্যস্ত থাকি।
এ দিন কালিয়াচকের বিভিন্ন এলাকায় ভোট প্রচার করেন জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম নুর। প্রচারে পিছিয়ে নেয় তৃণমূলও। এদিন বিকেলে হবিবপুরে দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে সভা করেন যুব তৃণমূল নেতা প্রসেনজিৎ দাস। বিজেপি এবং সিপিএম নেতৃত্বও ভোট প্রচার রাত পর্যন্ত করেন। প্রার্থীদের বক্তব্য, সকাল থেকেই বৃষ্টি, আকাশের মুখভার হয়ে থাকছে। তাই রাত পর্যন্ত প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে।
তবে বুনিয়াদপুরে বৃষ্টির জন্য প্রচার করতে পারেনি কোনও দলই। এদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত অঝোরে বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলের দিকে নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেছেন।