কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলা আসলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহের ‘নিদান’এর ফল। তাঁর উস্কানিতেই নিশীথের গাড়ির কাচ ভেঙেছে। এলাকায় অশান্তি ছড়িয়েছে। বিজেপি এমন অভিযোগই তুলেছে। যদিও ঘটনার পুরো দায় নিশীথের ঘাড়েই চাপিয়েছেন উদয়ন। দিনহাটার তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ, সমাজবিরোধীদের দিয়ে এলাকা দখল করতে চেয়েছিলেন নিশীথ। তবে ব্যর্থ হয়েছেন। অবশ্য এর পাল্টা দিতে ছাড়েননি নিশীথও।
শনিবার নিশীথের কর্মসূচি ছিল পূর্বঘোষিত। তবে দুপুরে তিনি বুড়িরহাট এলাকায় পৌঁছতেই শুরু হয় তুলকালাম। নিশীথের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। পরে দুই পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে গুলি, বোমাবাজির অভিযোগ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, দলীয় কার্যালয়ে হামলারও।
এই ঘটনায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সরকারকে নিশানা করেন। টুইটারে ওই অশান্তির একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে লেখেন, ‘‘এটাই রাজ্য সরকারের আশ্রিত তৃণমূল গুন্ডাদের রোজকার কাজ। মনে রাখবেন দিদি (পড়ুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়), মানুষ সব দেখছেন।’’
কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ যদিও বোমা বা গুলিবাজির কোনও উল্লেখ করেননি। তিনি জানান, শনিবার সকাল থেকে সাহেবগঞ্জ থানার বুড়িরহাট এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখান। কিছু ক্ষণের মধ্যে ঘোরালো হয় পরিস্থিতি। ১০ মিনিটের মধ্যে সেখানে বিজেপির কয়েক জন সমর্থক লাঠি, পাথর, ইট নিয়ে পৌঁছে যান। খবর পেয়ে সাহাবগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের বাধা সত্ত্বেও দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
প্রসঙ্গত, বিএসএফের গুলিতে রাজবংশী যুবকের মৃত্যুর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোর নির্দেশ ছিল তাঁরই। শনিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে উদয়ন অবশ্য অভিযোগ করছেন পরিকল্পনামাফিক উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি করেছেন নিশীথ। তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে দিনহাটা দখল করার জন্য এটা নিশীথের চক্রান্ত। উনি ৩৬টি গাড়ি নিয়ে দিনহাটায় ঢুকেছিলেন। কোনও গাড়িতে দিনহাটার কোনও মানুষ ছিলেন না। ছিলেন সমাজবিরোধীরা। গোলমালের জন্য ঢুকেছিলেন। সবাই নিজের চোখে দেখেছেন সেটা। তির ছুড়েছে। বোমা ছুড়েছে। গুলি ছুড়েছে। এক ব্যবসায়ীর গাড়িতে গুলি চলেছে।’’
শ্লেষের সুরে উদয়নের সংযোজন, ‘‘এই হচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তা-ও আবার স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী! এঁদের কাজ হল, বাজার দখল করে রাজনৈতিক ব্যবসা করা। কিন্তু দিনহাটার মানুষ, এঁদের ঠাঁই দেবে না।’’
অন্য দিকে, উদয়নের মন্তব্যে নিশীথের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘আমি ওঁকে নেতা বলেই মনে করি না। তাই প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। তবে তৃণমূল নেতৃত্বকে বলব, যতই কর্মীদের উস্কানি দেবেন, আমরা চোখে চোখ রেখে লড়াই করব।’’