বেহালায় হৈমন্তীর ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি ফেসবুক থেকে।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সম্প্রতি উঠে এসেছে হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। তার পর থেকেই ওই ‘রহস্যময়ী’ সম্পর্কে একের পর এক তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। ২০১৩ সালে একটি সংস্থার কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকায় শেয়ার কিনতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি। শনিবার বেহালায় তাঁর ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে এমনই নথি পাওয়া গিয়েছে। যা থেকে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের মুখে প্রথম বার হৈমন্তীর নাম শোনা যায়। কুন্তল দাবি করেন, গোপাল দলপতির স্ত্রী হৈমন্তীর কাছেই সব টাকা রয়েছে। তবে তা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কি না, সে ব্যাপারে খোলসা করেননি কুন্তল। এর পর থেকেই এই দুর্নীতিতে হৈমন্তীকে ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে। পেশায় মডেল হৈমন্তীর পৈতৃক বাড়ি হাওড়ার উত্তর বাকসাড়া এলাকায়। বেহালায় তাঁর একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটের বাইরে থেকেই একাধিক কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে শেয়ার কেনার আবেদনপত্রও।
ওই আবেদনপত্র দেখে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে একটি আর্থিক সংস্থার ২ লক্ষ শেয়ার কেনার জন্য আবেদন করেছিলেন হৈমন্তী। যার দাম প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। আবেদনপত্রে পেশা হিসাবে ‘ব্যবসা’র কথা লিখেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ওই শেয়ার হৈমন্তী কিনেছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে এসেছে গোপালের নাম। তাঁকে বেশ কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদও করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অতীতে চিটফান্ড মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন গোপাল। তিহাড় জেলেও ছিলেন। গোপালের সঙ্গে হৈমন্তীর যোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন কুন্তল। সেই হৈমন্তীই একটি আর্থিক সংস্থার শেয়ার কিনতে চেয়েছিলেন। যোগসূত্রের এই সম্ভাবনা ঘিরেই দানা বেঁধেছে নতুন রহস্য। যদিও শনিবার সংবাদমাধ্যমে গোপাল দাবি করেছেন, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে হৈমন্তীর কোনও যোগ নেই।
হৈমন্তীর বেহালার ফ্ল্যাট থেকে শেয়ার কেনার কাগজ ছাড়াও আরও বেশ কিছু নথি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে একটি বিলাসবহুল হোটেলের প্যাড। তাতে ১১টি নাম এবং ১২ কোটি টাকার উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে চিরকুট। সেখানে টাইপ করা রয়েছে চার টেট প্রার্থীর নাম, রোল নম্বর এবং ‘অ্যাপ্লিকেশন আইডেন্টিটি’। এই আবহে গোপালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখছেন ইডি এবং সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে গোপাল ওরফে আরমানের অ্যাকাউন্টে নমিনি হিসাবে নাম রয়েছে হৈমন্তীর।
তবে যাঁর নাম ঘিরে এত চর্চা চলছে, সেই হৈমন্তী এখনও অন্তরালেই রয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার হৈমন্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তবে মেসেজ দেখলেও কোনও জবাব দেননি। এর পরই তিনি হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) বদলে দেন।