পুরাতন মালদহের জাতীয় সড়ক অবরোধ সমর্থকদের। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে লোকসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের খবর, মালদহের আদিবাসী প্রধান ব্লকগুলির উপরে ভর করে জেলায় শক্তি বাড়িয়েছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে এনআরসি, সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতায় রাস্তায় নামল বহুজন ক্রান্তি মোর্চা। বুধবার সকাল থেকে পুরাতন মালদহ ও হবিবপুরে দীর্ঘক্ষণ জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়। তির, ধনুক, ধামসা-মাদল নিয়ে বিক্ষোভ দেখান সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে রাস্তায় না নামলেও আন্দোলনকে সমর্থন করেছে অন্যান্য আদিবাসী সংগঠনও। তাঁদের দাবি, ঝাড়খণ্ডের মতো এ বার বাংলার আদিবাসীরাও বিজেপির সঙ্গে নেই। এ দিন উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির বিলাসপুরেও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান ওই সংগঠনের সদস্যরা। অবরোধে আটকে পরে দূরপাল্লার বাস ও লরি।
যদিও এ সব কথায় আমল দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, মালদহের আদিবাসী প্রধান ব্লকগুলিতে ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে বিজেপির। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার আদিবাসী প্রধান ব্লকগুলিতে বিজেপি সাফল্য পেয়েছে। সেই সাফল্যের উপরে ভর করে উত্তর মালদহ লোকসভা আসনও কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। আগামী ভোটেও সাফল্য ধরে রাখতে লাগাতার আদিবাসী প্রধান ব্লকগুলিতে গেরুয়া শিবির প্রচার চালাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ৯টা থেকে হবিবপুর ব্লকের আইহোস্ট্যান্ডে মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বহুজন ক্রান্তি মোর্চার সদস্যেরা। একই সঙ্গে পুরাতন মালদহের কালুয়াদিঘি এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ। বিক্ষোভে শামিল হন মহিলারাও। হাতে পোস্টার, প্লাকার্ডের পাশাপাশি তির, ধনুক, ধামসা-মাদল নিয়ে রাস্তায় জমায়েত হন সংগঠনের শতাধিক কর্মী। দীর্ঘক্ষণ মালদহের দুই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অবরোধ থাকায় বিপাকে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের। পুলিশ জানায়, পরে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ অবরোধ বিক্ষোভ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
বহুজন ক্রান্তি মোর্চার মালদহের সংযোজক মোনাতুন হেমব্রম বলেন, ‘‘এনআরসি, সিএএ-র বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আমাদের আন্দোলন চলছে। মালদহের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। পুরাতন মালদহ এবং হবিবপুরে আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি। এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে ঠিকই। তবে তা সাময়িক। এনআরসি, সিএএ চালু হলে মানুষকে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হবে।’’
করণদিঘিতে সংগঠনের কর্মকর্তা রাম সরেন বলেন, ‘‘শুধু নতুন আইন নয়, এনপিআরও বাতিল করতে হবে। চালু করা যাবেনা এনআরসি।’’
আন্দোলনে শামিল না হলেও ওই সংগঠনের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে ঝাড়খন্ড দিশম পার্টিও। দলের নেতা মোহন হাঁসদা বলেন, ‘‘বিজেপি আদিবাসীদের ভোট নিয়ে লোকসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাফল্য পেয়েছে। আর এনআরসি, সিএএ চালু করে আদিবাসীদেরই সমস্যায় ফেলতে চাইছে। তার জেরে ঝাড়খণ্ড বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবি ঘটেছে। আশা করছি এ বার বাংলার আদিবাসীরাও বিজেপির নীতি বুঝতে পারবেন।”
তবে উত্তর মালদহের বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘বাংলার আদিবাসীরা বিজেপির সঙ্গে আছেন। আর বিজেপির সঙ্গেই থাকবেন।’’