মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি এবং ধরপাকড়ের জেরে কয়েক বছর ‘অপেক্ষাকৃত’ কম থাকলেও, কিছুদিন ধরে শিলিগুড়ি ঘিরে নতুন করে জমি-মাফিয়াদের সক্রিয়তা বেড়েছে বলে অভিযোগ। রামকৃষ্ণ মিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা জমি, বাড়ি দখলের চেষ্টার পিছনেও জমি কারবারিরা আছে কি না সে প্রশ্ন পুলিশ-প্রশাসন মহলেই দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় জমির দাম অতি দ্রুত বেড়ে চলায় জমির কারবারও বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে সামনে অন্য লোক রেখে জমি হাতানোর চেষ্টা চলে বলে অভিযোগ। মিশনের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে খোঁজ নেওয়ার পরে, পুলিশের একাংশের অনুমান, জমি কারবারিরা ঘটনার পিছনে থাকতে পারে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মিশনের জমিটি শিলিগুড়ির যে এলাকায় রয়েছে, সেখানে ৩০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকার কাছাকাছি কাঠা দরে জমি বিক্রি হয়। সে ক্ষেত্রে মিশনের হাতে থাকে প্রায় ১.৫৯ একর তথা প্রায় ৯৭ কাঠা জমির দাম কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। আর এই জমির দামের বাজার দখলে নিয়ে শহরে জমি-মাফিয়াদের সক্রিয়তা নতুন করে বেড়েছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামীণ ব্লকের পরে, শহর এবং পাশেও ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি বিধানসভায় জমি কারবারিদের সক্রিয়তা বেড়েছে বলে অভিযোগ।
২০১৮-২০২১ সাল অবধি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়িতে বিভিন্ন সভায় জমির অবৈধ কারবার নিয়ে হুঁশিয়ারি নিয়ে পুলিশকেও বার বার সতর্ক করেছেন। অনেক সময়ই শাসক দলের নাম জড়িয়েছে জমি দখলের অভিযোগে। তৎকালীন মন্ত্রী গৌতম দেবও একাধিক বার প্রকাশ্য সভা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন। এর জেরে, পুলিশ সে সময় ধরপাকড় শুরু করে। অন্তত ৭০ জন গ্রেফতার হয়। শহরে সেই সময় পুলিশ কমিশনার ছিলেন ভরতলাল মিনা। পরে গৌরব শর্মা, অখিলেশ চর্তুবেদীর আমলেও পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত বছর শেষ থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির বদল হয়েছে। পুলিশের একাংশের উদাসীনতায় গত বছর থেকে জমির কারবারিরা আবার শিলিগুড়িতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।
যদিও বর্তমান শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম বলেন, ‘‘এ সব বরদাস্ত করা হবে না। আগেও বহু বার আমি বলেছি, কোথাও দলের লোকজন অনৈতিক কাজে থাকলে, তাঁদের রেয়াত করার প্রশ্ন নেই। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলব।’’ একই ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার সি সুধাকরও।
পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির শহরে কাল্পনিক একটি ‘ত্রিভুজ’-কে কেন্দ্র করে মূলত জমি কারবারিদের দৌরাত্ম্য আবার বাড়ছে। ইস্টার্ন বাইপাস, সেবক রোড এবং ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘিরে ‘ত্রিভুজ’টি রয়েছে। জাতীয় সড়কটি সেবক অবধি ফোর লেন হচ্ছে। ইস্টার্ন বাইপাস আরও চওড়া, সংস্কার চলছে। তেমনই শহরের ভিতরের সেবক রোড, দুই মাইল থেকে শালুগাড়া অবধি রাস্তা চওড়া চলছে। এই সব অংশের দু’পাশের অঞ্চলে জমির দাম রাতারাতি বেড়েই চলছে।