চালু হল রেশন ব্যবস্থা। নিজস্ব চিত্র
ষোলো কিলোমিটার দুর্গম পথ ডিঙ্গিয়ে কালকূট বনবস্তিতে গিয়ে সরকারি গণবণ্টন ব্যবস্থার সুবিধা নিতে হত ওঁদের। গত চল্লিশ বছর ধরে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের গদাধর বনবস্তির ২০০ টি আদিবাসী দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের এই কষ্ট লাঘবের কথা ভাবেনি কেউ। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে খাদ্য দফতরের কর্তাদের এই সমস্যার কথা বলেও কোনও কাজ হয়নি।
অবশেষে দক্ষিণ পানিয়ালগুড়ি গ্রাম বিকাশ সমিতি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের সাহায্য নিয়ে খাদ্য দফতরের কর্তাদের মাধ্যমে খাদ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের সমস্যার কথা পৌঁছতেই পাল্টে গেল ছবিটা। খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে স্বাধীনতার পর এই প্রথম রেশন দোকান খোলা হল আলিপুরদুয়ার জেলার রাজাভাতখাওয়া গ্রামপঞ্চায়েতের গদাধর বনবস্তিতে।
শনিবার জেলা খাদ্য নিয়ামক দফতরের কর্তারা উপস্থিত থেকে এই রেশন দোকানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ছিলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নির্মল রাভা এবং দক্ষিণ পানিয়ালগুড়ি গ্রাম বিকাশ সমিতির কর্মীরা।
গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নির্মলবাবু জানালেন, চার দশকের বেশি সময় ধরে প্রত্যন্ত এবং দুর্গম এই বনবস্তির প্রায় ২০০ পরিবারকে তাঁদের রেশনের জিনিস আনতে ১৬ কিলোমিটার দূরে কালকূট বনবস্তির রেশন দোকানে যেতে হত। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামে রেশন দোকানের দাবিতে স্থানীয় গ্রাম বিকাশ সমিতির সাহায্য নিয়ে খাদ্য সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে সমস্যার কথা জানানো হয়। আজ আমাদের স্বাধীনতা পাওয়ার মতোই আনন্দ হচ্ছে।’’
শনিবার থেকে সেই রেশন দোকান চালু হয়ে যায়। গ্রাম বিকাশ সমিতির কর্তা পৃথ্বীশ কর্মকার বলেন, “আজ খুব ভাল লাগছে। ওদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হল।’’ খাদ্য বণ্টন দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে সপ্তাহে একদিন এই রেশন দোকান খোলা থাকবে। কেউ রেশন তুলতে না পারলে পরের সপ্তাহে তিনি তাঁর বকেয়া রেশন তুলতে পারবেন।
ওই বন বস্তির জোহান টোপ্পো, তেরেসা মিঞ্জ, ময়না তিরকেদের কথায়, ‘‘আমরা সবাই দিনমজুর। একদিন কাজে না গেলে ঘরে উনুন জ্বলে না। এতদিন রেশন আনার জন্য ৩২ কিমি পথ আসা যাওয়া করতে গোটা দিন চলে যেত। সে দিন আর কাজে যাওয়া হতো না। এ বার থেকে আর কাজ ফেলে রেশন আনতে যেতে হবে না। এখন গ্রামেই রেশন দোকান। ভাবতে পারছি না। আজ মনে হচ্ছে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হল।”