কালিম্পঙে বিজয় দিবসে প্রজাতান্ত্রিক দলের নেতারা: নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়ের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ না করে ক্ষমতার রাজনীতি করলে, দল ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা। বুধবার কালিম্পঙে দলের পঞ্চায়েত ভোটের বিজয় সমাবেশে এমনই জানালেন অনীত। তাঁর বক্তব্য, ভোটের রাজনীতি করে ক্ষমতায় এলেও, দলের প্রধান কাজ মানুষের পাশে থাকা। গ্রাম থেকে শহর— সর্বত্র রাজনীতির আগে মানুষের কাজ করার উপরে জোর দিয়ে অনীত হুঁশিয়ারি দেন, দলের টিকিটে ভোটে জিতে ক্ষমতার রাজনীতি চলবে না এবং দল দায়িত্ব দিলে, ফেরতও নিতে পারে।
২০১৭ সাল থেকে গুরুংয়ের দলের একটি গোষ্ঠী হিসাবে দল চালানো শুরু করেন অনীত। ২০২১ সালের শেষের দিকে নিজের দল তৈরি করেন। সেখানে বিমল গুরুংয়ের জনমুক্তি মোর্চার প্রায় ৮০ শতাংশ নেতা-নেত্রী যোগ দেন। অন্য দল থেকেও সদস্যেরা আসেন। বিধানসভা উপনির্বাচন, লোকসভা, দার্জিলিং পুরসভায় হারের পরে, ধীরে ধীরে দলকে মজবুত করেছেন অনীতেরা। জিটিএ ভোটে জয়ের পরে, দলের পালে হাওয়া লাগে। এর পরে, দার্জিলিং পুরসভা দখলে আসে। আর এ বার দার্জিলিং ও কালিম্প জেলায় ২৩ বছর পরে হওয়া পঞ্চায়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনই অনীতদের দখলে। ফলে, অনীতের দলে লোকবল বাড়ছে।
এই অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটের পরে, প্রথম সমাবেশেই দলীয় স্তরে অনুশাসন এবং শৃঙ্খলার বার্তা দিলেন অনীত। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের গ্রামের মানুষ আমাদের কথা, কাজ এবং প্রতিশ্রুতি দেখেই ভোট দিয়েছেন। শান্তি আর উন্নয়নের পক্ষে ভোট হয়েছে। তাই কাজ এবং নিষ্ঠার রাস্তাতেই থাকতে হবে সবাইকে। দল কোনও বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করবে না।’’
একই সঙ্গে এ দিন দলের তরফে ‘মিশন পুনর্মিলন’ ঘোষণা করা হয়েছে। দল থেকে সরে যাওয়া বা পাহাড়ের বসে থাকা নেতাদের আবার দলে আসার আহ্বান করেছেন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতারা। দলের নেতারা জানাচ্ছেন, পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক নেতা-নেত্রী ভোটের সময় নানা কারণে অখুশি হয়েছেন। কেউ দায়িত্ব বা টিকিট পাননি। কেউ রাগ করে সরে আছেন। এ বার সবাইকে দলে স্বাগত জানানো হবে। কাউকে দুঃখ দেওয়া দলের নীতি নয় বলে সভাপতি জানিয়েছেন। পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে বিমল গুরুং, অজয় এডওয়ার্ডদের নতুন করে ঘর ভাঙার আশঙ্কা তৈরি হল। কারণ, শাসক দলে ‘ঘর ওয়াপসি’র পাশাপাশি, নতুন লোকজন ঢোকানোর ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
এ দিনও পাহাড়ের ন’টি পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় আসার কথা বলেছেন অনীত। ভোটে অনীতেরা ছ’টি পঞ্চায়েত সমিতি জেতেন। পরে, গরুবাথান পঞ্চায়েত সমিতিতে তিন নির্দল শাসক দলে যোগ দেওয়ায় সাতটি পঞ্চায়েত সমিতি অনীতদের হাতে রয়েছে। বাকি একটি নির্দল এবং অন্যটি ‘মহাজোটের’ দখলে।