বাধা টপকেই চলছে যাটায়াত।—ছবি এএফপি।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র সচিবের নির্দেশিকার একদিন পর থেকে শিলিগুড়ি শহরে পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করল দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি স্টেট গেস্ট হাউসে টাস্ক ফোর্সের বৈঠকের পর পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তথা ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিধায়ক গৌতম দেব। এর পরেই দার্জিলিঙের জেলাশাসক আলাদা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশের শহর, জলপাইগুড়িতে অবশ্য সরকারি নির্দেশ মত দিনভর মাইকিং করে বুধবার বিকাল ৫টা থেকেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করা হয়েছে। আনন্দবাজারই একমাত্র সংবাদমাধ্যম, যারা প্রথম থেকে সংক্রমণ রুখতে পূর্ণ লকডাউন জরুরি তা বলে আসছিল।
যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের যুক্তি, করোনা সংক্রান্ত রাজ্যের কোনও নির্দেশিকা এলে তা টাস্ক ফোর্সে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে জেলা বা এলাকার টাস্ক ফোর্সই কী করা হবে তা ঠিক করার অধিকারী। সেই হিসাবে এ দিন সন্ধ্যায় আলোচনার পর লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। যদিও সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকেরই প্রশ্ন, সরকারি নির্দেশ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জারি হয়েছে। এ দিন দিনভর প্রশাসনিক বৈঠক বা মাইকিং করে বাসিন্দাদের প্রস্তুতির সময় দেওয়া যেত। তা হলে বুধবার সন্ধ্যা থেকে নিয়ম কার্যকর করা যেতে পারত। জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ সেই পথেই হেঁটেছে। শিলিগুড়িতে তা কোন অজানা কারণে হল না তা স্পষ্ট নয়।
মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘শহরের করোনা সংক্রমণ রুখতে সার্বিক লকডাউন প্রয়োজন ছিল। টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে আলোচনা করে তা কার্যকরী হচ্ছে। শহর লাগোয়া কয়েকটি এলাকায় কঠোরভাবে কন্টেনমেন্ট জ়োন হচ্ছে। সবাই মিলে আমাদের এ লড়াই জিততে হবে।’’ জেলাশাসক এস পুন্নমবল্লম এবং পুলিশ কমিশনার ত্রিপুরারি অর্থব জানিয়েছেন, আপাতত সাতদিন পূর্ণ লকডাউন কঠোরভাবে চলবে। আইন ভাঙলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের শহরগুলির মধ্যে শিলিগুড়ির পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আক্রান্তের সংখ্যা মঙ্গলবার অবধি ৮০০ ছুঁইছুই। মারা গিয়েছেন অন্তত ৩২ জন। এই অবস্থায় সংক্রমণ ঠেকাতে বাসিন্দারা ছাড়াও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিও কিছুদিন লকডাউনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি যায়। এরইমধ্যে শিলিগুড়িতে ১৫ দিনের পূর্ণ লকডাউন চেয়ে সরব হন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা, জেলা কংগ্রেস সভাপতি ও মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও। শঙ্কর এ দিন বলেন, ‘‘বিরোধীরা অনেকদিন ধরেই এই দাবি করছিল। তখন আমাদের কথার গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যাই হোক, দেরিতে হলেও সাতদিন নয়, অন্তত ১৫ দিনের কঠোর, কড়া পূর্ণাঙ্গ লকডাউন প্রয়োজন।
একইভাবে শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে শুধু লকডাউনের পাশাপাশি, চিকিৎসা পরিকাঠামো বাড়ানো, দফতরের মধ্যে কাজের সমন্বয় বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে ছিলেন পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য শঙ্কর ঘোষও। তিনি জানান, করোনার সংক্রমণের ধারাবাহিকতা ভাঙতে লকডাউন হচ্ছে. কিন্তু একটা সময় তো আবার আনলক হবে। তার জন্য প্রশাসনিক নজরদারি এবং পরিকাঠামোগত উন্নতি প্রয়োজন। যা এখন থেকেই ঠিক করে নিতে হবে। নয়তো আগামীদিনে একই ছবি শহরের সামনে আসতে পারে।