ঘরে ফিরল জলদাপাড়ার সুন্দর (মাঝখানে)। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
সন্ধ্যায় নাগালের কাছে চলে এসেছিল সে। কিন্তু সূর্যাস্তের পরে, আর ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে, গোটা অভিযানকে সাফল্য দিতে রাত জেগে শুরু হয় ‘অপারেশন সুন্দর’-এর প্রস্তুতি। ভোরেই শুরু হয়ে যায় অভিযান। তা প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলে। শেষ পর্যন্ত সফল হল ‘অপারেশন সুন্দর’। পিলখানা থেকে পালানোর ১১ দিন পরে বনকর্মীদের হাতে ধরা পড়ল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কুনকি হাতি সুন্দর। যদিও অভিযান শেষ করতে খুব কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি বন দফতরের আধিকারিক থেকে কর্মীদের।
বন দফতর সূত্রে খবর, সোমবার দিনভর বনকর্মীদের চোখের আড়ালে ছিল সুন্দর। কিন্তু রাত ৮টা নাগাদ আচমকাই জলদাপাড়া সদর দফতরের পিলখানার পিছন দিকে চলে আসে সে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পরে পিলখানায় নিজের থাকার জায়গায় গিয়ে সেখানে রাখা দানাও খায়। তার পরে ফের পিলখানার পিছন দিকের জঙ্গলে চলে যায়। দফতরের কর্মীদের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে সেই খবর পৌঁছে যায় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে। আধিকারিকরা নির্দেশ দেন, কর্মীদের কেউ সুন্দরকে তখন যেন ধরতে না যান। জলদাপাড়ার এক আধিকারিকের কথায়, “ওই মুহূর্তে সুন্দরের মনোভাব কেমন রয়েছে, তা কারও জানা নেই। ফলে, আচমকা ধরতে গেলে কর্মীদের ক্ষতিরও আশঙ্কা ছিল।”
বন দফতর সূত্রে খবর, এর পরেই সুন্দরকে ধরতে ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরির কাজ শুরু হয়। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সুন্দর’। সুন্দরের এক পায়ে বাঁধা শিকলের শব্দ পেয়ে বনকর্মীরা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছিলেন, সে পিলখানার পিছনের তৃণভূমিতেই রয়েছে।
ছক অনুযায়ী, ভোর পর্যন্ত সেখানে তাকে আটকে রাখতে ওই এলাকায় গুড়, নুন, দানা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, কলাগাছও ফেলে রাখা হয়। তাতে কাজও হয়। রাতে সেখানেই থেকে যায় সুন্দর। মঙ্গলবার ভোর ৪টে নাগাদ শুরু হয় সুন্দরকে ধরার মূল অভিযান। ততক্ষণে সেখানে চলে এসেছেন প্রাণী চিকিৎসক-সহ ‘ট্রাঙ্কুলাইজ়’ করার দলের কর্মীরা। দু’টি কুনকি হাতির পিঠে চেপে ওই দলের কর্মীরাই প্রথমে রওনা হন। পরে, আরও আটটি কুনকি হাতিতে চেপে সেখানে যান অন্য বনকর্মীরা।
দফতর সূত্রে খবর, সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সুন্দরকে তাক করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। ‘ডার্ট’ শরীরে বিঁধতেই তোর্সা নদীর দিকে পালাতে শুরু করে সে। পিছনে ধাওয়া করে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ তোর্সা নদীর চরেই দ্বিতীয় ‘ডার্ট’ তার দিকে ছোড়া হয়। তাতেই কাবু হয় সুন্দর। এর পরে তাকে ধরে পিলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
জলদাপাড়ার সহকারী বন্যপ্রাণ সহায়ক নভোজিৎ দে বলেন, “এই মুহূর্তে ভাল রয়েছে সুন্দর। তবে আগামী এক মাস তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সুন্দর কেন এমন আচরণ করছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।” বন দফতর সূত্রে খবর, ছোটবেলায় কাটানো চিলাপাতায় চেনা পথে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই পিলখানার কাছে চলে এসেছিল সুন্দর। যা তাকে ধরার সুযোগ করে দেয় বনকর্মীদের।