তিস্তায়, জলস্তর বেড়েই চলেছে। ২৭ মাইলের, বাংগে খোলা এলাকায় তোলা ছবি। ছবি: নিজস্ব চিত্র।
একদিকে তিস্তার জলস্ফীতি চলছে। আর একদিকে তিস্তাকে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য স্তরে টানাপড়েন অব্যাহত। সিকিমের উপর থেকে কালিম্পং— গত অক্টোবর থেকে তিস্তাকে ঘিরে পর পর প্রতিকূল পরিস্থিতিকে কেন ‘জাতীয় বিপর্যয়ে’র সমতুল হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি, শুক্রবার সেই প্রশ্ন উঠল। দাবি উঠেছে তিস্তাকে বাঁধতে কেন্দ্রের তরফে একটি ‘মাস্টারপ্ল্য়ান’ করারও।
শিলিগুড়ির মেয়র তথা তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য গৌতম দেবের কথায়, ‘‘চিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সেনাবাহিনীর কাছে স্পর্শকাতর এলাকা। সেখানে দু’টি রাজ্যের কী পরিস্থিতি, তা সবার সামনে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু ক্ষেত্রে পারদর্শিতা থাকে, জাতীয় বা বড় বিপর্যয়ের সমতুল হিসেবে ধরে তেমন ব্যবস্থা কেন্দ্রকেই নিতে হবে। দুই রাজ্য সরকার নিজেদের মতো করে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’ এ দিকে , শুক্রবার দুপুরে জাতীয় সড়কের হাল দেখতে যান রাজ্যের পূর্ত সচিব অন্তরা আচার্য, কালিম্পংয়ের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও অন্য আধিকারিকেরা। তিস্তাবাজারের রাস্তা ছাড়াও ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ‘স্পর্শকাতর’ এলাকাগুলির স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। তার আগে চিত্রে পর্যটক আবাসে প্রশাসন, পুলিশ, জিটিএ, এনএইচপিসি-র প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবারই দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা রাজ্য সরকার, জিটিএ-কে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কার থেকে তিস্তাবাজারের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে একহাত নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিস্তারিত জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেও যোগাযোগ করেছেন বলে দাবি। তিস্তাকে ঘিরে কেন্দ্রীয় দল মোতায়েনের দাবিও তুলেছেন সাংসদ। তিনি বলেছেন, ‘‘২০২৩ সালের অক্টোবরেও হড়পা বানে দার্জিলিং, কালিম্পংয়ের ক্ষতি হয়েছিল। রাজ্য সরকার এবং তার সহযোগী জিটিএ পুরোপুরি ব্যর্থ। এর জন্য আমরা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছি। প্রধানমন্ত্রীকেও সব জানানো হচ্ছে।’’
তবে কালিম্পংয়ের তিস্তাবাজার, বাঙেবাজারের মতো এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, গত বছর থেকে তিস্তার বার বার জলস্ফীতি, জাতীয় সড়কের ধসে যাওয়ার নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য তো টানাপড়েন চলছেই। রাজ্য, জিটিএ রাস্তা সংস্কার করেছে। বাঁধের কাজও হচ্ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সড়কের গত বছর মেরামত ছাড়া তো কিছু করছে না। তাদের হস্তক্ষেপে স্থায়ী সমাধান জরুরি।
সম্প্রতি শেষ হওয়া লোকসভা ভোটের আগে প্রচারে রাজু বিস্তা তিস্তাবাসীর পুনর্বাসন নিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে দাবি পাহাড়ের শাসক দল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার। গত কয়েকদিন সমাজ মাধ্যমে তা প্রচারও চলছে পুরোদমে। জাতীয় সংস্থা এনএইচপিসি সিকিমে ক্ষতিপূরণ দিলেও কালিম্পঙে কেন দেয়নি তা সাংসদের কাছে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। শুক্রবারই কালিম্পং-১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী মমতা গুরুং রাজু বিস্তাকে চিঠি পাঠিয়ে তিস্তবাসীর পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন।