Madan Mohan Temple

‘এ কাজ ভালবাসার, অনেক দায়িত্বের’, আলতাফের রাসচক্রের ঘূর্ণিতে মেলবন্ধন সকলের

ছোট্ট ঘরের দাওয়ায় বসে কাজ শুরু করেছেন আলতাফ মিয়া। ‘রাসচক্র’ তৈরির কাজ। এক মাস নিরামিষ খেয়ে তৈরি করবেন ওই ‘রাসচক্র’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১০:৫৮
Share:

কাজ শুরু করছেন আলতাফ মিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

বয়স হয়েছে ‘তিন কুড়ি’। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। তাতেও পরোয়া নেই। কোচবিহারের হরিণচওড়া লাগোয়া বাঁধের নীচে, তোর্সা নদী ঘেঁষে টিন আর দরমার বেড়া দেওয়া ছোট্ট ঘরের দাওয়ায় বসে কাজ শুরু করেছেন আলতাফ মিয়া। ‘রাসচক্র’ তৈরির কাজ। এক মাস নিরামিষ খেয়ে তৈরি করবেন ওই ‘রাসচক্র’। নভেম্বরে রাসমেলায় যা ছুঁয়ে পুণ্য অর্জন করবেন পুণ্যার্থীরা। গত রবিবার, লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন ‘রাসচক্র’ তৈরির কাজ শুরু করেছেন আলতাফ। বললেন, “এ কাজ ভালবাসার। অনেক দায়িত্বের। আমার পূর্বপুরুষেরা করেছেন। আমিও করছি।’’

Advertisement

বাঁশ থেকে বাতা তৈরি করে, কাগজের কারুকাজ দিয়ে ওই ২২ ফুটের চক্র গড়া হয়। গোটা কুড়ি বাঁশ লাগে। চক্রের মধ্যে রাধা-কৃষ্ণ, শিব-পার্বতী, লক্ষ্মী-সরস্বতী-সহ ৩২ জন দেবদেবীর ছবি থাকে। তার চারপাশ দিয়ে থাকে নকশা।

১৮১২ সালে কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে প্রথম রাসমেলার আয়োজন হয়। ওই বছর রাসপূর্ণিমা তিথিতে কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণ ভেটাগুড়িতে নবনির্মিত রাজপ্রাসাদে যান। সে উপলক্ষে সেখানে রাসমেলা বসে। ১৯১৭ সালে কোচবিহারে প্যারেড গ্রাউন্ডে রাসমেলা স্থানান্তরিত হয়। এখন ওই মাঠ ‘রাসমেলার মাঠ’ নামে পরিচিত। আলতাফ বাবার কাছে শুনেছেন, রাজ আমলে মহারাজা ‘রাসচক্র’ ঘুরিয়ে রাসের উদ্বোধন করতেন। বর্তমানে কোচবিহারের জেলাশাসক রয়েছেন সে দায়িত্বে।

Advertisement

আলতাফের কাজ নিয়ে গর্ব বোধ করে গোটা কোচবিহার। ‘অল ইন্ডিয়া ইমাম মোয়াজ্জেম সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র কোচবিহার জেলা সম্পাদক হাফিজ় আনোয়ার বলেন, ‘‘কোচবিহারের মহারাজা আলতাফ মিয়ার পূর্বপুরুষদের হাতে রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বড় উদাহরণ। কোচবিহারের বাসিন্দা হিসাবে তা নিয়ে আমরা গর্ব বোধ করি।’’ বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘আলতাফের পরিবারের হাতে বানানো রাসচক্র আমাদের ঐতিহ্য। কোচবিহারের মহারাজা ওঁর পরিবারকে সে দায়িত্ব দিয়ে সামাজিক এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিলেন। আমরাও সেটা চাই।’’ কোচবিহারের পুরপ্রধান তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ধর্মীয় ভেদাভেদ যে কোচবিহারে কাজ করবে না, সেটা আলতাফের বানানো রাসচক্রে আমজনতার মাথা ঠেকানোতেই বোঝা যায়।’’

‘রাসচক্র’ গড়ে পান ১২ হাজার টাকা। স্ত্রী, পুত্র, পুত্রের পরিবারকে নিয়ে ভরা সংসার আলতাফের। আয় বলতে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট থেকে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে পাওয়া মাসিক পারিশ্রমিক সাড়ে আট হাজার টাকা। তবে চিকিৎসার জন্য আর্থিক টানাটানি লেগে রয়েছে। নেতাদের অবশ্য আশ্বাস, তাঁরা আলতাফের পরিবারের পাশে রয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement