Nisith Pramanik

‘নিশীথ-ঘনিষ্ঠের’ বিরুদ্ধে আরও পাঁচ অভিযোগ

সিতাই উপনির্বাচনের আগে ওই অভিযোগ ঘিরে হইচই পড়েছে। নিশীথ অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি পরিমল রায় নামে কাউকে চেনেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৫
Share:

পরিমল রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পাঁচ বাসিন্দা। সোমবার ময়নাগুড়ি থানায়। —নিজস্ব চিত্র।

রবিবার দায়ের করা হয়েছিল একটি অভিযোগ। চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের আপ্ত-সহায়ক পরিচয় দেওয়া পরিমল রায়ের বিরুদ্ধে সোমবার ময়নাগুড়ি থানায় আরও পাঁচ জন অভিযোগ দায়ের করলেন। তাঁদের অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নাম করে দেড় থেকে ৪-৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন সিতাইয়ের বাসিন্দা পরিমল।

Advertisement

সিতাই উপনির্বাচনের আগে ওই অভিযোগ ঘিরে হইচই পড়েছে। নিশীথ অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি পরিমল রায় নামে কাউকে চেনেন না। পরিমলকে ‘প্রতারক’ বলেও দাবি করেছেন নিশীথ। যদিও রবিবার ময়নাগুড়ি থানায় প্রথম অভিযোগ দায়ের করা বিজেপির প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি বিশ্বনাথ শীল দাবি করেছেন, ২০২০ সালে তিনি যখন নিশীথের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর অফিসে গিয়েছিলেন, সেই সময় পরিমল নিশীথের ঘরেই ছিলেন। বিশ্বনাথের দাবি, তিনি নিশীথের কাছে চাকরির আবেদন জানিয়েছিলেন। নিশীথ তাঁকে নয়াদিল্লিতে চাকরির কথা বললে তিনি রাজি হননি। পরের দিন পরিমল বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে বিশ্বনাথের বাড়িতে যান বলে অভিযোগে লেখা হয়েছে। অভিযোগ, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন। সেই সময়েই বিশ্বনাথ এবং গ্রামের আরও কয়েক জন ধাপে ধাপে পরিমলের হাতে ৫০ লক্ষেরও বেশি টাকা তুলে দেন বলে অভিযোগ।

অভিযুক্ত পরিমলকে নানা সময় বিজেপির কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে বলেও দাবি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও ওই ব্যক্তিকে 'প্রতারক' বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্ৰতিমন্ত্রী। নিশীথ বলেন, ‘‘পরিমল রায় নামে কেউ আমার আপ্তসহায়ক কখনও ছিলেন না। যাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে আমি প্রতারক ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।’’

Advertisement

বিজেপির দাবি, কেউ যদি টাকা তুলে থাকেন, তার সঙ্গে দল বা মন্ত্রী জড়িত নন। মূল অভিযোগকারী বিশ্বনাথ শীল ২০১৬ সাল থেকে বিজেপির মেখলিগঞ্জের মণ্ডল সভাপতি ছিলেন বলে দাবি করেছেন। মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা এবং বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দধিরাম রায় বলেন, ‘‘বিশ্বনাথ শীল এক সময়ে দলের মণ্ডল সভাপতি ছিলেন। দলবিরোধী কার্যকলাপ-সহ চাকরির প্রলোভনে টাকা তোলার অপরাধে অনেক আগেই আমরা দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেছি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ তিনি করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তৃণমূলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই তিনি এমন বলছেন।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহের মন্তব্য, "মুখ ও মুখোশ কার তা দেখা উচিত। মূর্তি তো পরিমল রায়, কিন্তু ভিতরে কাঠামো কার, তা বার করতে হবে। পুলিশ দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কার কার কাছে ওই টাকা গিয়েছে তা খুঁজে বের করুক।"

পুলিশ সূত্রে খবর, টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। সেই লেনদেনগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে। সোমবার হিতেন্দ্র বর্মণ, জনার্দন বর্মণ, সম্পদ রায়, দেবব্রত রায় এবং কমল বর্মণ থানায় পরিমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগকারীরা সকলেই মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা। মূল অভিযোগকারী বিশ্বনাথও মেখলিগঞ্জে থাকতেন। বর্তমানে তিনি ময়নাগুড়ির বাসিন্দা। তিনি ময়নাগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করায় বাকিরাও ময়নাগুড়ি থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছেন। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খন্ডবহালে বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলা রুজু করা হয়েছে।”

জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে সিতাইয়ে একটি রাজনৈতিক গোলমালে পুলিশের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাতেও পরিমল রায় অন্যতম অভিযুক্ত। সে সময়ও পরিমল নিশীথ প্রামাণিকের শিবিরের লোক বলে পরিচিত ছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, পরিমলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement