নেতা: দার্জিলিঙে নিজের দফতর তথা স্টাডি রুমে হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। মঙ্গলবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
আর কয়েক মাসের মধ্যে পাহাড়ে জিটিএ আর বাকি পুরসভাগুলির ভোট হওয়ার সম্ভাবনা। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন পাহাড় সফরে। তার আগে ‘হামরো পার্টি’র প্রধান অজয় এডওয়ার্ড এক একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দিলেন, স্থানীয় নির্বাচনে তাঁর দল ‘একলা চলো’ নীতিই নেবে। একই সঙ্গে অবশ্য তিনি লোকসভা ভোটে জোট করার ব্যাপারেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। জোট কার সঙ্গে? অজয় সরাসরি কোনও জবাব দেননি।
সম্প্রতি দার্জিলিং পুরভোটে ১৮টি ওয়ার্ড জিতে পুরসভা দখল করেছে অজয়ের দল। তিনি নিজে এখনও একে রাজনৈতিক দল বলেন না। বলেন, ‘স্টার্ট আপ’, যাদের সৎ ভাবে দার্জিলিঙের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ও তাগিদ রয়েছে। তবে একই সঙ্গে তিনি ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন, বুঝিয়ে দিলেন নিজের কথাতেই। নিকট ভবিষ্যতে জিটিএ ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কালিম্পং, কার্শিয়াং ও মিরিক পুরসভারও মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছরের মাঝামাঝি। তাই এই তিন পুরসভাতেও ভোট হয়ে যেতে পারে পুজোর আগে। এই সব ক’টি ক্ষেত্রেই একা লড়বেন বলে জানিয়েছেন অজয়। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে যারাই গিয়েছে, তাদেরই পাহাড়ে এখন আর জায়গা নেই। ভোটাররা তাদের ভোট দেননি। আমরা নতুন দল। আমাদের উপরেই ভরসা রেখেছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, তাঁরা সেই ভরসা হারাতে চান না।
তবে লোকসভা নির্বাচনে যে জোট করতে হবে, সেটাও মেনে নিয়েছেন অজয়। তিনি বলেন, ‘‘তখন তো সমতলেরও চারটে কেন্দ্র থাকবে। শুধু পাহাড় দিয়ে হবে না। জোট তো করতেই হবে।’’ কিন্তু কার সঙ্গে যাবেন? সরাসরি কোনও জবাব দেননি তিনি। যদিও জানিয়েছেন তাঁর প্রাক্তন দলের জোট শরিক বিজেপিকে নিয়ে তাঁর ‘ছুঁৎমার্গের’ কথা। বিজেপির সঙ্গে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর দল ও পরিবারের মধ্যে থেকে আপত্তি রয়েছে, জানান তিনি। তার উপরে গত তেরো বছরে বিজেপি পাহাড়ের জন্য কিছু করেনি, উল্লেখ করেন সেই প্রসঙ্গও।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এ বারে দার্জিলিং পুরভোটে বিজেপি ও তাদের জোট সঙ্গী জিএনএলএফের ভোটপ্রাপ্তি দেখলেই বোঝা যায়, পাহাড়ে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কোথায় এসে ঠেকেছে। সে ক্ষেত্রে বড় দল হিসেবে রইল তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদল হিসেবে তৃণমূলও লোকসভা ভোটে সমতলে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। অজয় সেই সুবিধা কাজে লাগাবেন কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে।
তৃণমূল নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবও আপাতত তাস হাতে রেখে খেলার পক্ষপাতী। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় ভোটে স্থানীয় দলগুলি লড়াই করুক যে যার মতো। লোকসভা ভোটে বরং জট হওয়া জরুরি।’’ তিনি জানান, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও সেটাই মনে করেন।
আগামী সপ্তাহে যদি দার্জিলিং পুরসভার নতুন চেয়ারম্যান রীতেশ পোর্টেলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ হয়, তখন কি এই সেতুবন্ধনের ‘শিলান্যাস’ হবে? প্রশ্ন পাহাড়েই।