রানওয়ে চত্বরে ছাগলের দল। চলছে টোটো। নিজস্ব চিত্র
ফের উত্তরবঙ্গের তিন জেলা—কোচবিহার, মালদহ, বালুরঘাট থেকে বিমান চলাচল শুরুর ব্যাপারে নড়াচড়া শুরু হল। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্ৰী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে দেখা করে তৃণমূল সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেখানে জ্যোতিরাদিত্য শীতে কোচবিহার থেকে বিমান চলবে বলে প্রতিনিধিদের আশ্বাস দেন। মন্ত্রী প্রতিনিধি দলকে জানান, মালদহ থেকে ন’আসনের বিমান চালু করার ব্যাপারে আগ্রহপত্র পেয়েছেন। তেমন কিছু না পেলেও, বালুরঘাট থেকে বিমান চলাচলের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দেন।
‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমান চলাচলের জন্য পুরোপুরি তৈরি কোচবিহার বিমানবন্দর। বর্তমানে ওই বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য এক হাজার ৬৯ মিটার। সে রানওয়েতে খুব বড় বিমানের ওঠানামা সম্ভব নয়। সে কারণে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা আগে নেওয়া হয়। এয়ারপোর্ট ডিরেক্টর মলয়কান্তি দে বলেন, ‘‘পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। আমাদের কাছে এখনও কোনও নির্দেশ পৌঁছয়নি।’’ ‘কোচবিহার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সম্পাদক রাজেন বৈদ বলেন, ‘‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে শিল্প— সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের জন্য বিমান পরিষেবা জরুরি। ওই পরিষেবা চালু হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে যাবে।’’
মালদহের ছবি অন্য। কোটি টাকা খরচে সেখানে তৈরি হয়েছে রানওয়ে। অভিযোগ, সে রানওয়েতে এখন চরে গরু, ছাগল। এমনকি, মোটরবাইক ‘রেসিং’ থেকে শুরু করে পরিবহণ দফতরের মোটরবাইক, গাড়ির লাইসেন্সের পরীক্ষার ‘ট্রায়াল রান’ও হয় সে রানওয়েতেই। কর্তৃপক্ষের দাবি, রানওয়ে তৈরির কাজ শেষ হলেও, এখনও শৌচাগার, যাত্রী প্রতীক্ষালয় গড়ে ওঠেনি। নেই ‘পার্কিং জ়োন’ও। যদিও মালদহ বিমানবন্দরে ১৯ আসনের বিমান চলাচলের পরিকাঠামো রয়েছে বলে দাবি ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র। ২০১৭ সালে বিমানবন্দরটির হাল ফেরানোর উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। প্রায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়। গত ডিসেম্বর মাসে বিমানবন্দর পরিদর্শনে যায় ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধি দল। সে সময় মালদহে ১৯ আসনের বিমান চলাচলের সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়। তবে এখনও কিছু পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ বাকি রয়েছে।
অন্য দিকে, বালুরঘাট শহর লাগোয়া মাহিনগরের বিমানবন্দরে পূর্ব-পশ্চিমে এক হাজার ৪০০ মিটার রানওয়ে রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে দাবি, সেখানে ৪০-৪৫ আসনের ছোট বিমান নামতে পারে। এর আগে, একাধিক বার অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রকের প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে এসেছে। গত বছরও পরিদর্শন করা হয়। অভিযোগ, তার পরে, জেলা বা রাজ্য প্রশাসনকে এ বিষয়ে আর কিছু জানানো হয়নি। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা বলেন, ‘‘আমরাও একটি সমীক্ষা বিমানবন্দর নিয়ে করেছি। রাজ্য যেমন নির্দেশ দেবে, এগোব।’’
এর আগে, ওই বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমতি দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছিল রাজ্যের তরফে। যদিও বালুরঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এটা একেবারে অপপ্রচার। কেন্দ্রীয় সরকার বালুরঘাট বিমানবন্দর নিয়ে তৎপর রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার বালুরঘাট বিমানবন্দর চালু করতে 'আগ্রহপত্র' আহ্বান করেছিল। কিন্তু কেউ তাতে সাড়া দেননি।