Malda

কাঁটাতারের ওপারের জমিতে সোনার ধান, নীরবে ‘সবুজ বিপ্লব’ মালদহে

উচ্চ ফলনশীল বীজ ও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ধান উৎপাদনে বিপুল সাফল্য এসেছে ৫-৬টি ব্লকের জমিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৬:৩৭
Share:

তখন শুরু হয়েছে ধানের চাষ। —ফাইল চিত্র

বাংলাদেশের গমে এক ধরনের ধসা রোগ দেখা দিয়েছিল। আবার সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় পাট ও ভুট্টা চাষেও নিষেধাজ্ঞা ছিল সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মালদহের সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয়দের জমিতে চাষ আবাদ। এই পরিস্থিতিতেই কৃষি দফতরের সহায়তায় কার্যত সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন মালদহের বেশ কয়েকটি ব্লকের সীমান্ত এলাকার চাষিরা। উচ্চ ফলনশীল বীজ ও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ধান উৎপাদনে বিপুল সাফল্য এসেছে এই বিস্তীর্ণ এলাকার জমিতে।

Advertisement

নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ-সহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের গ্রামগুলিতে কাঁটাতারের ওপার থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বহু ভারতীয়র জমি রয়েছে। ভারতীয় কৃষকরা বিএসএফ-এর কাছে পরিচয়পত্র জমা রেখে ওই সব জমিতে প্রতি দিন চাষের কাজে যান। আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। দীর্ঘদিন ধরে এ ভাবেই চাষের কাজ চলছিল মালদহের কালিয়াচক, ইংরেজবাজার, হবিবপুর, বামনগোলা, পুরাতন মালদহ এলাকার গ্রামগুলিতেও। কাঁটাতারের ওপারের ওই জমিতে মূলত পাট ও ভুট্টার চাষ হত। কিন্তু কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে গম চাষে এক ধরনের ধসা রোগ ধরা পড়ে। ভারতেও ওই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় রাজ্যের কৃষি দফতর সীমান্তবর্তী এলাকায় গম চাষে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তখন শুরু হয় ভুট্টা ও পাট চাষ। কিন্তু দুই ফসলই উচু হওয়ায় সীমান্তে চোরাচালান রুখতে ও নজরদারিতে সমস্যা হওয়ায় আপত্তি তোলে বিএসএফ। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সেই চাষও।

কয়েক পুরুষ ধরে কৃষিকাজ করে আসা চাষিরা পড়েন মহা সমস্যায়। এলাকায় দেখা দেয় জীবিকা ও খাদ্য সঙ্কট। রুজি-রুটির টানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন এলাকার বহু নিম্নবিত্ত পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। কিন্তু লকডাউনে ঘরে ফিরে মহাসঙ্কটে পড়েন তাঁরা। সেই সময়েই শুরু হয় বিকল্প ভাবনাচিন্তা।

Advertisement

আরও পড়ুন: যোগী-রাজ্যে ৭ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন, যকৃত কেটে নিল ধর্ষকরা

সিপিএম এর কৃষক সংগঠনের স্থানীয় নেতা তথা গোলিপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হারাধন রজক সীমান্ত এলাকার কৃষকদের সমস্যার কথা প্রশাসনিক কর্তাদের জানান। এরপর এগিয়ে আসেন জেলা কৃষি দপ্তরের কর্তারা। পাঁচ বছর থেকে পড়ে থাকা পতিত জমিতেই ফসল ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ব্লকের কয়েক হাজার কৃষক পরিবার। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ ধান উৎপাদন হওয়ায় হাসি ফুটেছে ওই কৃষক পরিবারগুলির মুখে।

রাজ্য কৃষি দফতরের আধিকারিকরা জেলা প্রশাসন ও বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে কাঁটাতারের ওপারে ফাঁকা জমিগুলিতে ধান চাষ শুরু করেন। কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে ওই পরিবারগুলিকে বিনা পয়সায় উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও সার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ধান রোপনের যন্ত্রও দেয় কৃষি দফতর। তার পরেই কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোপাল নগর থেকে শ্মশানি, চরি অনন্তপুর, মহব্বতপুর সুকদেবপুরের মতো গ্রামের চাষিরা। প্রায় ৩০০টি পরিবার নতুন উদ্যমে লেগে পড়েন কৃষিকাজে। ৯৫ থেকে ১০০ দিনের মাথায় ২৫০ বিঘার বেশি জমি ভরে গিয়েছে সোনার ধানে। প্রতি বিঘা জমিতে ফলেছে গড়ে প্রায় ৮ কুইন্টাল করে ধান। সরকারি বাজারমূল্যে ওই ধান বিক্রি করলে মিলবে কুইন্টাল প্রতি প্রায় ১৮০০ টাকা। আলতুশ মিয়া, সালেক মিয়া, সবুর মিয়া, নিরঞ্জন মণ্ডল, তাজামুল হক এর মতো কৃষকরা তাই ধন্যবাদ দিচ্ছেন রাজ্য সরকারের কৃষি দফতরকে।

আরও পড়ুন: ফুরফুরার পিরজাদা ত্বহার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অধীর-মান্নান

হারাধনবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কৃষিজীবী পরিবারগুলির সদস্যদের আচমকাই পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হয়ে যাওয়া মানতে পারিনি। তাই সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি ওদের বাপ ঠাকুরদার পেশায় ফিরিয়ে আনতে। কৃষি দফতর সাহায্য না করলে এই সাফল্য আসত না।’’

প্রায় পতিত জমিতে পরিণত হওয়া ওই জমিতে ধান উৎপাদনে সাফল্য আসায় খুশি কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরাও। কালিয়াচক ৩ ব্লকের দায়িত্বে থাকা কৃষি দপ্তরের সহকারি নির্দেশক অভিষেক লাবার বলেন, ‘‘আত্মা প্রকল্পের মাধ্যমে ওই কৃষকদের সাহায্য করা হয়েছে। প্রকল্প সফল হওয়ায় আমরা খুশি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিনামূল্যে ধানের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। যন্ত্রের মাধ্যমে খুব সহজে ও তাড়াতাড়ি ধান রোপন করা সম্ভব হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কালিয়াচকের জমি কৃষি সহায়ক। ধানের পর এ বার ডাল উৎপাদনের কথাও ভাবছি আমরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement