সবুজ ঢেকেছে ফ্লেক্স। জলপাইগুড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন জি.এল.বি.টি ড্যালটন। পরের চেয়ারম্যান হন মেজর এইচ ব্যালিয়ন। তিনি ১৮৮৮ সালের ১৯ মার্চ থেকে ১৮৯৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। জলপাইগুড়ি পুরসভার ১২৫ বছরের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে উমেশ শর্মা ১৮৯২ সালের এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখের পুরবোর্ডের সভায় গৃহীত নীতিগুলি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে দিয়েছেন। মোট ৩৭টি নির্দেশিকা সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রচার করা হয়েছিল। তার মধ্যে কয়েকটি হল, কোনও বাড়িতে গবাদি পশু মারা গেলে ৬ ঘন্টার মধ্যে পুরসভাকে জানাতে হবে। রাতে মারা গেলে চার ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে। না হলে হবে জরিমানা। ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের জমি দখল করলে, অবৈধ নির্মাণ করলে তা হবে দন্ডনীয় অপরাধ। শোভনভাবে কিংবা ঢাকা দিয়ে খাদ্যদ্রব্য, মাংস বহন করতে হবে। বাড়িঘরের সীমানার মধ্যে জঙ্গল সাফ করে সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে। রাস্তার ধারের গাছকাটা এবং ডালকাটা যাবে না। রাস্তা কেটে নিকাশির ব্যবস্থা করা যাবে না। সমস্যা হলে পুরসভাকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। পথের কোন স্থানে মানুষের অসুবিধা সৃষ্টি করে দোকান এবং বাড়ি তৈরি করা যাবে না। নিকাশি জলের বাধা সৃষ্টি করে নালার ওপর কোন নির্মাণ করা চলবে না। শৌচাগার নির্মাণের সময় পুর নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। ওয়ার্ড কমিশনারেরা প্রয়োজন মনে করলে ওয়ার্ডকে জীবাণু মুক্ত করার জন্য চুন কার্বলিক অ্যাসিড, ফিনাইল ছড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। সে কাজে বাধা প্রদান করলে জরিমানা হতে পারে।
১২৩ বছর আগের ওই নির্দেশিকা এখন যেন ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সে সময়ে জলপাইগুড়ি শহরে গরুর গাড়ি ছাড়া আর কিছু চলত না। তাদের জন্য বলা হয়েছিল, যে যত্রতত্র গাড়ি ফেলে রেখে কেউ চলে যেতে পারবে না। রাজপথে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে পারবে না। ভুক্তভোগীরা জানান, রোজ সকাল তেকে গভীর রাত পর্য়ন্ত কদমতলা থেকে শুরু করে শহরের নানা রাস্তার ধারে কয়েকশো গাড়ি বেআইনি ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কেন সকলকে জরিমানা করা হয় না তা বুঝে উঠতে পারেন না শহরবাসীদের অনেকেই।
উপরন্তু, শহরে সকলেরই মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দৃশ্য দূষণ। শহরে রাস্তার ধারে অবৈধভাবে উঠেছে হোর্ডিং। বাম কাউন্সিলরদের দাবি শহরে হোর্ডিং-এর জন্য দূষণ হচ্ছে। তিস্তা উদ্যানের গাছপালা হোর্ডিংএ ঢেকে যাচ্ছে। একই অবস্থা হতে চলেছে পোস্টাপিস মোড়, কদমতলা এবং শহরের অন্যত্র। অবশ্য তারা স্বীকার করেছেন যে তাদের দলের হোর্ডিংও আছে। কংগ্রেসের তরফে প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্তের দাবি, তাঁদের আমলে বেআইনি হোর্ডিং খুলে দেওয়া হতো।
এখন পুরসভা কী বলছে? পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, শহরে বাণিজ্যিকভাবে মোট ২০টি হোর্ডিং আছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বেআইনিভাবে মোট কত হোর্ডিং লাগানো হয়েছে তার হিসেব পুরসভার কাছে নেই। সে সংখ্যাটা শতাধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভোটের সময়ে ফেস্টুন, ফ্লেক্স, হোর্ডিং যা টাঙানো হয়, তার অনেকটা সারা বছর কেন রয়ে য়ায় সেই প্রশ্নের উত্তর মেলে না। জলপাইগুড়ি পুরসভার বিরোধী সিপিএম কাউন্সিলার দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জলপাইদুড়ি শহরের স্বার্থে পুর বিধি কঠোর ভাবে বলবঞ হওয়া জরুরি।’’ তা হলে শহরে দৃশ্যদূষণ রোধে পুরসভা কবে অভিযানে নামবে? পুর চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি শহরে বাণিজ্যিক হোর্ডিং আইন মেনে বসানো হয়েছে। যদি কোনও ত্রুটি থাকে তা হলে খতিয়ে দেখা হবে।’’