প্রতীকী ছবি।
কেএলও নিয়ে আশঙ্কা জীবন সিংহের ভিডিয়ো বার্তা আসার পর থেকেই চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের। বিশেষ করে যে সব এলাকা দিয়ে সহজে রাজ্যে ঢোকা যায়, সেখানে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হবে কিনা, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে জঙ্গল, পাহাড় ও খরস্রোতা নদী অধ্যুষিত ভুটান সীমান্ত। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, ২০০৩ সালে কেএলও-র যখন চূড়ান্ত দাপট, সেই সময়ে এই অঞ্চল ছিল তাদের বিচরণ ক্ষেত্র। আত্মসমর্পণ করা কেএলও জঙ্গিরাও জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের মধ্যে দিয়ে তাঁরা ভুটান থেকে বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন। কোনও কোনও সময়ে করিডর হিসেবে অসমের কিছু দুর্গম অঞ্চলকেও ব্যবহার করতেন তাঁরা। প্রাক্তন কেএলও-দের দাবি, সেই সময়ে আলফার সঙ্গে তাঁদের যথেষ্ট সুসম্পর্ক ছিল।
সম্প্রতি জীবন সিংহের ভিডিয়ো বার্তা সামনে আসার পরে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার পুলিশ-প্রশাসনের তাই দ্বিমুখী চিন্তা। এক দিকে ভুটানের সঙ্গে দুর্গম সীমান্ত এলাকার উপরে নজরদারি বাড়ানো। অন্য দিকে, পড়শি রাজ্যের সঙ্গে সীমানাতেও নজর রাখা।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “জেলার ভুটান সীমান্ত কিংবা অসম সীমানায় নজরদারির সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্গম এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারি রয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া থানাগুলি সতর্ক রয়েছে।” ভুটান সীমান্তে পাহারা দেওয়ার ভার যাদের উপরে রয়েছে, সেই এসএসবি-র সঙ্গেও তাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান আলিপুরদুয়ারের পুলিশকর্তারা। কোচবিহারের এক পুলিশকর্তাও জানান, অসম সীমানায় পাহারা ও কড়া নজরদারি রয়েছে।
জীবনের বার্তাগুলি সামনে আসার পরে কেন এই তৎপরতা শুরু হয়েছে? পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তরফে বলা হচ্ছে, এর জন্য বিশ বছর আগেকার ইতিহাসটা একবার দেখে নেওয়া জরুরি। আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা জীবন দীর্ঘ সময়ে আত্মগোপন করেছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রে সেই সময়ে বলা হয়েছিল, পড়শি বিভিন্ন দেশে তখন তিনি ঘুরেছেন। তাঁর সঙ্গীরাও সেই সব দেশে ঘাঁটি গেড়েছিল বলে দাবি। আবার অসমের জঙ্গি গোষ্ঠী আলফার সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল কেএলও-র। ফলে জীবনের নতুন বার্তায় এই সব এলাকায় কেএলও-র প্রতি নরমপন্থীরা নতুন করে সক্রিয় হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্র মনে করছে। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, জীবন এখন ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কোনও জঙ্গলে আত্মগোপন করে আছেন। সেখান থেকে যদি তিনি সরাসরি অসমে থাকা পুরনো সূত্রগুলিকে চাঙ্গা করতে চান, তা হলে দেশের পক্ষে বিপদ— মনে করছেন গোয়েন্দারা। সে কারণে, ভুটান সীমান্ত এবং অসম সীমানায় নজর বাড়ানো জরুরি, বলছেন তাঁরা।