দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র
নতুন গাড়ি কেনার পরে প্রথমেই যে আবদারটা আসে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি— ‘কী রে,
খাওয়াচ্ছিস কবে?’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নতুন গাড়ি কেনা উপলক্ষে খাওয়াদাওয়া, হই-হুল্লোড় চলছিল। গভীর রাতে সেই গাড়িতে চেপেই ঘুরতে বেরোন ছয় বন্ধু। কিন্তু গাড়ি কিছুটা যাওয়ার পরেই বীরপাড়ার ডিমডিমা চা বাগানের কাছে ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। গুরুতর জখম হন এক জন। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। বর্ষবরণের রাতেও এথেলবাড়ির এই রাস্তার উপরে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃত পাঁচ যুবকের নাম আশরফ আলি (৩৮), বরুণ সরকার (২৯), সঞ্জয় বিশ্বাস (২৭), মিঠুন দাস (২৭) ও মনোজ শা (২৯)। আশরফ ও বরুণের বাড়ি বীরপাড়ার ক্ষুদিরামপল্লিতে। সঞ্জয় ও মিঠুনের বাড়ি শান্তিনগরে। মনোজের বাড়ি বিরবিটি চা বাগান এলাকায়। এই ঘটনায় গুরুতর জখম শিবু দাসের বাড়ি ক্ষুদিরামপল্লিতে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আশরাফ কিছু দিন আগে একটি গাড়ি কেনেন। সেই খুশিতেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেন। যেখানে তাঁর পাঁচ বন্ধুও যোগ দেন। বীরপাড়াতেই সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা ছিলেন। রাত প্রায় ১২টা নাগাদ নতুন গাড়িতে চেপেই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হন আশরফ। এথেলবাড়ির দিক থেকে ঘুরে বীরপাড়ার দিকে ফিরছিলেন তাঁরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, খুব দ্রুত গতিতে চলছিল গাড়িটি। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ডিমডিমা চা বাগানের কাছে পাথরবোঝাই একটি ডাম্পারকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে আশরফের গাড়ি।
ডিমডিমা চা বাগান এলাকার বাসিন্দা শীবরাজ ওরাওঁ বলেন, ‘‘সেই সময় আমি ঘুমোতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসি। এসে দেখি, একটি পাথরবোঝাই ডাম্পারের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে ছোট গাড়িটি কার্যত দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে।’’ খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বীরপাড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। গাড়ির দরজা কেটে চালককে বের করতে হয়।
বর্ষবরণের রাতে ফালাকাটা থানার এথেলবাড়িতে এই রাস্তার উপরেই একটি পথ দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়। সে দিনও বাইকটি প্রচন্ড গতিতে চলছিল বলে অভিযোগ। ফলে রাতের রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি বা মোটরবাইক চালানো নিয়ে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছএ না কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও জেলার এক পুলিশ কর্তার দাবি, ‘‘রাতে ওই রাস্তার উপর পুলিশের যথেষ্ট নজর থাকে।’’