প্রতীকী ছবি।
উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় গোষ্ঠী কোন্দল থামাতে নেতানেত্রীদের একমাস সময়সীমা বেঁধে দিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। সোমবার ও মঙ্গলবার দু’দিনে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেন। দলীয় সূত্রের খবর, কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে মালদহ বা জলপাইগুড়ি, সব জায়গাতেই নেতাদের কোন্দল সামনে এসেছে। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের নেতারা অভিষেক, পিকের সামনেই বচসায় জড়ান। অভিষেক ও পিকে সবাইকে ঐক্যের জন্য এক মাস সময় দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। সামগ্রিক পরিস্থিতির রিপোর্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলনেত্রীর পরামর্শ নিয়ে এক মাস পরে শিলিগুড়িতে একই রকমভাবে পর্যালোচনা বৈঠক হবে। দলের উত্তরবঙ্গের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব শুধু বলেন, ‘‘ভোটের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’’
এ দিন বিকেলের পর অভিষেক এবং পিকে কলকাতায় ফিরে গিয়েছেন। সোমবার গভীর রাতের পরে মঙ্গলবারও সকাল থেকে বৈঠক শুরু হয়। আলিরপুরদুয়ারের সৌরভ চক্রবর্তী, মোহন শর্মা, মৃদুল গোস্বামী, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যে সমন্বয়ে জোর দিতে বলা হয়। কোচবিহার জেলার নেতারা বৈঠকেই একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে শুরু করেন বলে সূত্রের খবর। তেমনিই, বিজেপি ছেড়ে পুরনো দল ফেরা বালুরঘাটের বিপ্লব মিত্রকে কর্মসূচিতে ডাকা হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন থেকে বিপ্লবকে দলের সব কর্মসূচিতে ডাকার নির্দেশ দেন অভিষেক। জলপাইগুড়িতে কিসান কল্যানীকে ঘিরেও কোন্দল অব্যাহত। দার্জিলিং পাহাড়ে সাংসদ শান্ত ছেত্রী, লাল বাহাদুর রাইদের বিরুদ্ধে দলে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। সমতলের মহকুমায় পুরনো নেতাদের অনেককেই মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে।
সব পক্ষের মত শোনার পরে অভিষেক নেতাদের কোন্দল বন্ধ করতে বলেন। তেমনিই, পিকে ক্ষমতাসীনদের বলেন পুরনো, বর্ষীয়ান নেতাদের গুরুত্ব দিতে। জেলার প্রত্যেক কর্মসূচিতে যাতে নতুন, পুরনো মিলে করা হয়, সে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারে বিশাল মিছিল হলেও পুরনো নেতাদের বেশিরভাগকেই সভাপতি পার্থপ্রতীম রায়ের পাশে দেখা যায়নি। তাতে খুশি নন অভিষেক, পিকেরা। মালদহে সকলকে এক হয়ে চলার বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। জেলা সভাপতি মৌসম নুর ও প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর সঙ্গে চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, জেলা কো-অর্ডিনেটর মানব বন্দ্যোপাধ্যায়, দুলাল সরকার ও অম্লান ভাদুড়িকেও সভায় ডাকা হয়। জেলার সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে মোথাবাড়ি, বৈষ্ণবনগর, ইংরেজবাজার, রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর এবং চাঁচলে নেতৃত্বদের মধ্যে কিছু সমস্যার কথা উঠেছে। কৃষ্ণেন্দু বৈঠকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়ে বিভিন্ন দলীয় বৈঠক তাঁকে ডাকা হয় না বলেও অভিযোগ করেন। উত্তর দিনাজপুরের অবশ্য কাউকে বৈঠকে ডাকা হয়নি।
শেষে সবাইকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেন অভিষেক ও পিকে। দলের উত্তরবঙ্গের এক শীর্ষ নেতা জানান, এই বৈঠকের রিপোর্ট পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।