Cooch Behar

বিপদে পড়লেই ডাক পরে ‘বুড়ির’

ছয় বছর বয়স থেকে সরকারি হোমে দিন কেটেছে জ্যোৎস্নার। তেরো বছর তিনি হোমে ছিলেন। মাধ্যমিক পাশ করার পরেই অঙ্গনওয়াড়িতে কাজ পান।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৩৩
Share:

পুরস্কার হাতে। নিজস্ব চিত্র

‘‘এই বুড়িকে একটু খবর দে।’’ কেউ বিপদে পড়েছে শুনলেই পাশ থেকে কেউ বলে উঠেন ‘বুড়িদি’র কথা। শান্ত-ধীরস্থির বুড়ির কাছে খবর পৌঁছলেই সব কাজ ফেলে পৌঁছে যান বিপদগ্রস্ত মানুষটির কাছে। কোচবিহারের ভিলেজ-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বুড়ির ভাল নাম জ্যোৎস্না ঘোষ। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী তিনি। সকালে অঙ্গনওয়াড়ি সামলে বাড়ি ফেরেন। এর পরেই শুরু হয় তাঁর অন্য কাজ। গ্রামের লোকে বলে, ‘‘বুড়ি দশভুজা।’’ জ্যোৎস্নার কথায়, ‘‘ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছি। তবুও চেষ্টা করি, মানুষের পাশে থাকার।

Advertisement

ছয় বছর বয়স থেকে সরকারি হোমে দিন কেটেছে জ্যোৎস্নার। তেরো বছর তিনি হোমে ছিলেন। মাধ্যমিক পাশ করার পরেই অঙ্গনওয়াড়িতে কাজ পান। জ্যোৎস্না বলেন, ‘‘মা ছিল আয়া। আর বাবা ভবঘুরে। তাই মা আমাকে হোমে নিয়ে আসেন।’’ অঙ্গনওয়াড়ির কাজ পাওয়ার পরে গ্রামে ফেরেন। বিয়েও হয়। স্বামী সুস্থ নন। সংসারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে পড়ে। তিলে তিলে লড়াই করে মেয়েকে বড় করেন তিনি। এ বার তাঁর মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

এরই ফাঁকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন জ্যোৎস্না। তাঁর মায়ের মতো যাঁরা আয়া, তাঁদের উপরে অত্যাচার শুনলেই ছুটে যেতেন। এক বার এক আয়ার শরীরে গরম জল ছিটিয়ে দিয়েছিল। জোৎস্নার আন্দোলনের চাপে শাস্তি হয় অভিযুক্তের। প্রশিক্ষণ নিয়ে নারী সুরক্ষা, নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন জোৎস্না। প্রশাসনের সহযোগিতায় পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করেন একটি মেয়েকে। এক দিন এক কিশোরী দিনহাটা কলেজ হল্টে বসে কাঁদছিল। মেয়েটি জানায়, তাকে যৌনপল্লিতে বিক্রির চেষ্টা হয়েছে। লোকজন বলতে শুরু করে, ‘‘বুড়িদিকে খবর দে।’’ শুনেই দৌড়ে যান জোৎস্না। পুলিশকে খবর দেন। আইন মেনে ওই মেয়েকে পৌঁছে দেওয়া হয় তার বাড়িতে। তাঁর প্রতিবেশী ববিতা পারভীন বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আয়ার কাজ করি। যে কোনও সমস্যায় আমরা বুড়িকে পাই।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement