ঠান্ডা: চাদর জড়িয়ে টোটোতে। শিলিগুড়ির পথে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
কাঠ ফাটা রোদে মালদহে এখনই আম পাকার উপক্রম। বালুরঘাটে আত্রেয়ীর চরে তরমুজও ফুটিফাটা হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু, চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে খানিকটা হলেও হিমের পরশ পাহাড় ও লাগোয়া সমতলে।
নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও ঘুর্ণাবর্তের সাঁড়াশি চাপে সিকিমের বেশ কিছু এলাকায় রোজই বরফ পড়ছে। সান্দাকফুর তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে যাচ্ছে। খাস দার্জিলিঙে রাতে পারদ নেমে যাচ্ছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নীচে। সমতলের দাবদাহ এড়িয়ে কুচি বরফ গায়ে মেখে নিতে এখন উৎসাহী পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙে। ঝঞ্ঝা মাথায় নিয়েই সিকিমের ছাঙ্গু-নাথুলায় যাওয়ার ছাড়পত্র নিতে রোজই লোক বাড়ছে গ্যাংটকের অফিসে। তাতেই পাহাড়-ডুয়ার্সে গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম একটু আগেভাগেই জমজমাট।
মানেভঞ্জনের ল্যান্ডরোভার চালক সংগঠনের তরফে পেম্বা ভুটিয়া ভীষণ খুশি। শনিবার তিনি জানালেন, গত দুদিন ধরে সান্দাকফু যাওয়ার জন্য উৎসাহীদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। তেমনই টানছে সিকিমও। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘রোজই ছাঙ্গু-নাথুলায় বরফ পড়ছে। তা দেখার জন্যই ভিড়। কলকাতা তো বটেই, সুদূর দত্রিণ ভারত থেকেও বহু পর্যটক এখন ঠাণ্ডা উপভোগ করতে হাজির হয়েছেন দার্জিলিং-সিকিমে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতেও সন্ধ্যার পরে হালকা জ্যাকেট, চাদর মুড়ি দেওয়া ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে রাস্তায়।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিম শাখা সূত্রের খবর, ঘূর্ণাবর্তের থেকে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখা। উত্তরে ভূপৃষ্ঠের ওপরে থাকা ঘুর্ণাবর্ত থেকে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত হয়েছে ওড়িষার দিকে। দুইয়ের প্রভাবেই উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমে বৃষ্টি-তুষারপাত চলছে। সিকিমের লাচেন, লাচুং, ইয়ুমথাং, নাথুলা এলাকায় শনিবারেও তুষারপাত হয়েছে। এ দিন সকালে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে শিলিগুড়িতে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে যখন ঝিরঝিরি বৃষ্টি হয়েছে, সে সময়ে উত্তর সিকিমে তুষারপাত হয়েছে।’’
গত শুক্রবার থেকেই গ্যাংটকে বৃষ্টি চলছে। আগামী পাঁচদিন আবহাওয়া এমনই থাকবে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ সূত্রেও জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর অংশ এবং লাগোয়া এলাকায় একটি ঘুর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। সেই ঘুর্ণাবর্তই বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প টেনে আনছে বলেই ঝড়-বৃষ্টি চলছে উত্তরবঙ্গে। আপাতত ৪৮ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গের আকাশ মেঘে ঢাকা থাকবে বলে আবহাওয়াবিদদের অনেকের ধারনা।
এ দিন শিলিগুড়ি-জলপইগুড়ির তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ছিল। কিন্তু, আকাশের মুখ বার থাকায় তাপ অনুভূত হয়নি। বরং, সন্ধ্যার পরে লাটাগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের জয়ন্তী, শিলিগুড়ি শহরেও হালকা শীতপোষাক পরতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। শনিবার রাতে শিলিগুড়িতে বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়ায়ও। এমনিতেই শহরের রাস্তায় সন্ধের পরে ভিড় কম ছিল। রাত ৯টার পরে হাওয়া দিতে শুরু করায় রাস্তা সুনসান হয়ে যায়। সাড়ে ন’টা নাগাদ বৃষ্টি নামে। হিলকার্ট রোড-বর্ধমান রোডে পথচারীদের সংখ্যা কমে আসে। বিধান মার্কেট সহ বিভিন্ন বাজার এলাকায় তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায় দোকানও। ঝোড়ো হাওয়া বইলেও কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।
আজ, রবিবার হিমেল বাতাস উপভোগ করতে দার্জিলিং-সিকিমের পথে ভিড় বাড়বে বলেই মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।