প্রখর রোদ্রে ছাতা মাথায় চা পাতা তুলছে মহিলা শ্রমিকেরা, দাগাপুর চা বাগানে তোলা ছবি। ছবি:বিনোদ দাস।
কখনও বৃষ্টি নেই, কখনও অতিবৃষ্টি। কখনও টানা রোদ, কখনও হঠাৎ তাপমাত্রার রেকর্ড পতন। উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রায় গত কয়েকবছর এমনিই নানা হঠাৎ পরিবর্তনে মার খেয়েছে চায়ের উৎপাদন। চা চাষে কী ধরনের তাপমাত্রা বা বৃষ্টি প্রয়োজন তার নির্দিষ্ট মাপকাঠি রয়েছে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার আবহাওয়ার দীর্ঘদিনের প্রবণতা লক্ষ রেখেই এই তিন জেলায় মূলত প্রথমে চা চাষ শুরু হয়। যদিও আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনে চা চাষের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। বলা হচ্ছে, আবহাওয়া প্রবণতা দেখে চা চাষের পদ্ধতিতে বদল আনা যায়, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষাও চালাচ্ছে চা গবেষণা কেন্দ্র। তারই মাঝে চা-কে মরসুমভিত্তিক শস্যবিমার আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও তৈরি হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার সেই কমিটির প্রথম বৈঠক। সেখানে চা চাষে আবহাওয়ার সমস্যা এবং শস্যবিমার আওতায় আনার পদ্ধতিগত রূপরেখা তৈরি হবে বলে সূত্রের খবর।
চা পর্ষদের তরফেই বৈঠক ডাকা হয়েছে। কমিটিও গড়ে দিয়েছে পর্ষদ। কমিটিকে বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে, চা উৎপাদক, আমলারা রয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’র আওতায় চা-কে আনা হচ্ছে। গত বছর চা উৎপাদনের হেরফেরের কারণ ছিল আবহাওয়া। চলতি বছরেও তাই। চা শিল্পে প্রথম ফ্লাশের পাতার বিকল্প নেই বলেই দাবি করা হয়। শীতের সুখা সময়ে গাছের পরিচর্যা চলে। মাসতিনেক বাগান বন্ধ থাকার পরে শীতের শেষ-বসন্তের শুরুর দিকে পাতা তোলা ফের শুরু হয়। এই সময়ের পাতাকে প্রথম ফ্লাশ বলা হয়। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় প্রথম ফ্লাশের উৎপাদন কমে গিয়েছে। যে টুকু উৎপাদন হয়েছে তারও গন্ধ এবং মান অনেকাংশে ভাল নয় বলে দাবি। প্রথম ফ্লাশ যখন শেষের দিকে তখন বৃষ্টি শুরু হয়। দ্বিতীয় ফ্লাশের উৎপাদন বেড়েছিল। তার পর থেকে চলছে টানা বৃষ্টি। অতিবৃষ্টিতে এ বার দ্বিতীয় ফ্লাশের উৎপাদনও মার খেতে বসেছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় চা পাতা উৎপাদক থেকে কারখানা সকলের ক্ষতি হয়েছে। বিমা প্রকল্পের সুযোগ থাকলে এই উৎপাদনের ক্ষতি পোষানো যেত বলে দাবি।
ছোট চা চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে বিমা প্রকল্পের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন। এ বার সেটি কার্যকর হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য তথা ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন সিস্টা-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “মরসুমভিত্তিক শস্যবিমার আওতায় ছোট চা চাষিরা চলে এলে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। আমরা ছোট চা বাগানে জলসেচের প্রকল্পও চেয়েছি। দেখা যাক, প্রথম বৈঠকে কী হয়। বিমার আওতায় আনার সঙ্গে আবহাওয়ার খামখেয়াল বুঝে চাষের পদ্ধতিও বদলানো প্রয়োজন, না হলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে চা উৎপাদনে ভারতকে পিছিয়ে পড়তে হবে।”