পড়ে রয়েছে চিতাবাঘের রক্তাক্ত দেহ। নিজস্ব চিত্র
তিন বছর আগের আতঙ্ক উস্কে মাদারিহাটের গ্যারগেন্দা চা বাগানে ফের নৃশংস ভাবে একটি চিতাবাঘকে খুনের অভিযোগ উঠল। বুধবার সকালে বাগান থেকে চিতাবাঘের রক্তাক্ত দেহটি উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। ময়নাতদন্তের পর বন কর্তাদের প্রাথমিক অনুমান, চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। এমনকি, তার মুখে ভারি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতও করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে গ্যারগেন্দা চা বাগানের দুখোয়া লাইনের কাছে গ্যারগেন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া এলাকায় রাস্তায় ওই পুরুষ চিতাবাঘের দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। চিতাবাঘটির বয়স আনুমানিক পাঁচ-ছয় বছর বলে বনকর্তারা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থলে যান শীর্ষ বনকর্তারাও। তাঁরা জানিয়েছেন, চিতাবাঘটির মুখের একটা অংশ ক্ষতবিক্ষত ছিল। যার জেরে মুখের সামনে মাটিতে অনেকটাই রক্ত পড়েছিল।
এর পরই ঘটনার তদন্তে সেখানে জলদাপাড়া থেকে স্নিফার ডগ নিয়ে যাওয়া হয়। বন কর্তারা জানিয়েছেন, স্নিফার ডগটি দুখোয়া লাইনের একটি জায়গা পর্যন্ত যায়। তা থেকেই তাঁদের অনুমান, দুখোয়া লাইনেই চিতাবাঘটিকে প্রথম মারা হয়। এর পর গুরুতর জখম অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া এলাকা পর্যন্ত এসে সেখানেই পড়ে যায় চিতাবাঘটি। কিন্তু আক্রমণকারীরা জখম চিতাবাঘটির পিছু নেয়। বনকর্তাদের সন্দেহ, চিতাবাঘটি পড়ে যেতে বড় বড় পাথর ছুড়ে সেটাকে আবার মারা হয়। তারপর মুখের মধ্যে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়।
জলদাপাড়ার ডিএফও দীপক এম বলেন, ‘‘চিতাবাঘের দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। আমরা নিশ্চিত, সেটিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।’’
বছর তিনেক আগে মাদারিহাটের এই গ্যারগেন্দা-সহ একাধিক চা বাগানে মানুষের সঙ্গে চিতাবাঘের সংঘাতের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, চিতাবাঘের আক্রমণে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আরও অভিযোগ, সেই সময় এই গ্যারগেন্দা চা বাগানের ৩২ ও ৩৫ নম্বর সেকশনে বিষ মেশানো মাংস খাইয়েও দুটি চিতাবাঘকে মেরে ফেলা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কিছু দিন ধরে বাগানে ফের চিতাবাঘের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। মাঝে মধ্যেই নানা জায়গায় হানা দিচ্ছে চিতাবাঘ। তার পরই এ দিনের ঘটনা। এর ফলে আবারও মানুষ ও চিতাবাঘের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। বনকর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, চিতাবাঘের হানায় ক্ষতি রুখতে সব সময়ই গ্যারগেন্দা-সহ আশপাশের চা বাগানগুলোতে নজর রাখা হচ্ছে।