প্রশ্ন: বাঘাযতীন পার্কের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ‘অনিশ্চিত’ তালিকার শিক্ষকেরা। নিজস্ব চিত্র।
আদালতের নির্দেশে প্রাথমিকে যে ৩৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তাঁদের মধ্যে শিলিগুড়ি শিক্ষা-জেলায় রয়েছেন ৩৮০ জনের মতো। আদালতের নির্দেশের পরে তাঁদের একাংশ শনিবার শিলিগুড়ি বাঘাযতীন পার্কে জড়ো হয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভও দেখান। তাঁদের দাবি, এই জেলায় যাঁদের নিয়োগ হয়েছে তাঁদের ‘অ্যাপ্টিচিউড টেস্ট’ হয়েছে। তবে সে সময় অনেকেরই প্রশিক্ষণ ছিল না। আবার অনেকের ছিল। তা ছাড়া, বিভিন্ন জেলায় যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছেন তাঁদের একাংশকে আদালত ডাকলেও, এ দিকে যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছেন তাঁদের কথা শোনা হয়নি। এই নির্দেশে তাঁদের মতো যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিপাকে পড়লেন, আদালতের তরফে তাঁদের অধিকাংশের কথা শোনা হয়নি।
শিলিগুড়ির প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দিলীপ রায় বলেন, ‘‘ওই সময় ৩৮০ জনের কাছাকাছি নিয়োগ হয়েছিল শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলায়। বিস্তারিত নথিপত্র দেখেই বলা সম্ভব হবে।’’
এ দিন বিক্ষোভে যাঁরা শামিল হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত এলাকার স্কুলগুলির প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশও ছিলেন। তাঁরা জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে। তবে এক যোগে এত জন শিক্ষক-শিক্ষিকা বাদ গেলে, স্কুলগুলিতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে বলে মনে করছে বিরোধী শিক্ষক সংগঠনও। শিলিগুড়িতে বিজেপির শিক্ষা সেলের আহ্বায়ক জয়ন্ত রায় বলেন, ‘‘এমনিতেই মাধ্যমিক বা প্রাথমিক যে কোনও স্তরের স্কুলগুলিতেই শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক নেই। শহরের একাংশ স্কুলে বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকলেও গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্কুলে ছাত্রছাত্রী অনুপাতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। এই নির্দেশে সে সমস্যা আরও বাড়বে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এ সব কারণেই সাধারণ মানুষ সরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে ভরসা হারাচ্ছে।’’
পরিস্থিতির সমালোচনা করেছেন নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির দার্জিলিং জেলা সম্পাদক বিদ্যুৎ রাজগুরু। তাঁর দাবি, ‘‘পরীক্ষার্থী যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন, সকলেই দোষী নন। তৃণমূল সরকার এজেন্ট দিয়ে নিয়োগ করেছে। সরকারি নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে, সে নিয়ম ভুল হওয়ায় এখন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এঁদের অনেকেই যোগ্য। তাই এই পরিস্থিতিতে এঁদের কাউকে অযথা হেনস্থা বা অসম্মানের মুখে যাতে পড়তে না হয় সেটা দেখা দরকার।’’
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তথা পুরপ্রতিনিধি রঞ্জন শীলশর্মা বলেন, ‘‘এরা কেউই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে চাকরি করছেন না। এঁদের জন্য আইনের মধ্যে থেকেই যা করা সম্ভব, তা করব।’’