শূন্য: খাঁ খাঁ করছে বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল। মঙ্গলবার ঘুঘুমারির বাড়ইপাড়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
বিয়েপর্ব মিটে গিয়েছিল রাতে। তারপর খাওয়াদাওয়া সেরে রাতভর হইচই। মঙ্গলবার ভোরের দিকে বাড়ির দিকে বাসে রওনা হন বরযাত্রীরা। কয়েকঘণ্টা পর সেই বাসেই দুর্ঘটনা। গোলকগঞ্জের বালাজানে পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় বরযাত্রী বোঝাই বাসটির। ঘটনাস্থলেই মারা যান বাসের তিন যাত্রী। হাসপাতালে মারা যান একজন। অন্তত ১২ জন জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনজন আশঙ্কাজনক। এই ঘটনায় শোকের ছায়া ঘুঘুমারির বাড়ইপাড়ায়।
কোচবিহার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘুঘুমারি বাজারের ব্যবসায়ী বাড়ইপাড়ার বাসিন্দা অভিজিৎ রাজভরের বিয়ে ছিল অসমের ফকিরাগ্রামে। সোমবার সকালেই একটি বড় বাসে ৬০-৬৫ জনের একটি বরযাত্রী দল ফকিরাগ্রামে পৌঁছয়। বর আলাদা একটি গাড়িতে পৌঁছন। রাতে বিয়ের পরে ভোরের দিকে সবাই একই সঙ্গে ঘুঘুমারির উদ্দেশে রওনা হন। আলাদা গাড়িতে পাত্র-পাত্রী সকালে তুফানগঞ্জের বলরামপুর পর্যন্ত পৌঁছে যান। সেই সময় বরযাত্রীদের বাসটি ছিল বালাজানে। সেখানেই দুর্ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বাসটি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কোচবিহারের পথে আসছিল। সেই সময়ই উল্টোদিক থেকে আসা লোহার পাইপ বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান তীব্র গতিতে ধাক্কা মারে বাসের সামনে। ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রীতম কর (১৪), বাস ও পিকআপ ভ্যানের দুই খালাসি।
গুরুতর জখম বরযাত্রীদের কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মারা যান বাবন কর (৩৮) নামে আর এক বরযাত্রী। পুলিশ আরও জানিয়েছে, প্রীতম বাবনের ছেলে। দুর্ঘটনায় বাবনের স্ত্রী রিম্পি, পাত্রের বাবা পরেশ রাজভর-সহ তিনজনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। রিম্পি একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। বাবনের ন’বছরের ছেলের হাত ভেঙেছে। জখম ১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃতদের মধ্যে তিনজন কোচবিহারের বাসিন্দা। দু’জনের বাড়ি কোতোয়ালি থানার ঘুঘুমারির বাড়ইপাড়ায়। দুর্ঘটনার খবর ঘুঘুমারি পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ মঙ্গলবার বলেন, “এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। এমন ঘটনার কথা ভাবাই যায় না। আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার সন্তোষ নিম্বালকর বলেন, “ওই ঘটনা জানার পরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়।” ঠিক কীভাবে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে গোলকগঞ্জ থানার পুলিশ।
বরযাত্রীদের কয়েকজন জানান, সামনের দিকে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই জখম হন। পুলিশও তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, সকালের দিকে সবাই গাড়ির মধ্যে তন্দ্রায় ছিলেন। পাত্রের কাকা শঙ্কর রাজভর ঘটনার পর থেকে মুষড়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, “এমন একটি আনন্দের অনুষ্ঠান এভাবে বিষাদে পরিণত হবে ভাবতে পারছি না।”