ধূপগুড়িতে সিপিএম পার্টি অফিসে ঢুকে পাঁচজনকে গুলি করে মারার ঘটনায় প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি টম অধিকারী, মিল্টন ওরফে মিহির দাস, হর্ষবর্ধন দাস সহ ৩৩ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিল জলপাইগুড়ি জেলা আদালত৷ সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষ্য প্রমাণ না পেয়েই শুক্রবার আদালত ওই রায় দেয়।
২০০২ সালের ১৭ অগষ্ট। সন্ধে সাতটা নাগাদ ধূপগুড়িতে সিপিএমের জোনাল অফিসে চলছিল গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক৷ ঠিক সেই সময় আচমকাই সাইকেলে করে কয়েকজন কেএলও জঙ্গি সেখানে যায়৷ পার্টি অফিসে ঢোকার আগেই শূন্যে গুলি ছুড়তে থাকে তারা৷ এরপর পার্টি অফিসে ঢুকে এলোপাথারি গুলি চালায়৷ গুলিতে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য গোপাল চাকি সহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়৷ অভিযোগ, গোপাল চাকিকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়। এই ঘটনায় ১৫ জন গুরুতর জখমও হন। গুলি চালিয়ে এলাকা থেকে ফের সাইকেলে চেপেই কেএলও জঙ্গিরা চলে যায়। সেই রাতেই ধূপগুড়ি থানায় কেএলও-দের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়৷
পুলিশ মোট ৩৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে৷ ৫৯ জন সাক্ষীর বয়ানও লিপিবদ্ধ করা হয়৷ ৩৩ জন বিচারে অংশ নেয়৷ বাকিদের কেউ মারা গিয়েছেন। কেউ পলাতক। আদালতে ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়৷ তারপর এ দিন জেলা ও দায়রা বিচারক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত ৩৩ জনকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন৷
এই মামলায় সাক্ষীরা অনেকেই সেই সময়ের শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ কিন্তু আদালতে যে ১৪ জন সাক্ষ্য দেন, তাদের একজনও আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি শব্দও বলেননি৷ এমনকি সাক্ষীদের কেউ আদালতে অভিযুক্তদের সনাক্তও করেননি৷ জলপাইগুড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবী সোমনাথ পাল বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকার জন্য এবং তাদের সনাক্তকরণ না হওয়ার জন্য বিচারক এ দিন প্রত্যেককে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছেন৷’’
অভিযুক্তদের আইনজীবী দীপক দত্ত ও অভিজিৎ সরকার বলেন, ‘‘সরকার পক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি৷ তাই আদালত এ দিন ৩৩ জনকেই এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস করেছে৷ আমরা আদাবলতের এই নির্দেশে সন্তুষ্ট৷
এ দিনের এই রায়ের পর টম অধিকারী বলেন, ‘‘আজকের এই রায়ে আমরা সবাই খুবই খুশি৷’’ ধূপগুড়ির সিপিএমের নেতাদের অভিযোগ, পার্টি অফিসে কে এল ও জঙ্গিরা গুলি চালালে ঘটনাস্থলে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয় ৮ জন। পুলিশ ঘটনাস্থলে আহতদের সাক্ষী হিসাবে কেন ডাকেনি তা বোঝা যাচ্ছে না।
গুলিতে নিহত গণেশ রায়ের স্ত্রী গীতা রায় ও সুবল রায়ের স্ত্রী যশোদা রায় খবর শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা বলেন, “বিচার পেলাম না। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আদালতের বিচারে যদি কে এল ও জঙ্গিরা আমাদের স্বামীদের গুলি করে না মেরেই থাকে, তবে তাঁদের কে গুলি করে মারল তা পুলিশ ও আদালত খুঁজে বের করুক।”
সিপিএমের ধূপগুড়ি সদর এরিয়া কমিটির আহ্বায়ক জয়ন্ত মজুমদার বলেন, “পুলিশ ও বর্তমান সরকারের যোগসাজসে জঙ্গিরা মুক্তি পেল। পার্টিতে আলোচনা করে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। ”