বিশ্ব ঐতিহ্য সপ্তাহের ফেস্টুন হাতে কচিকাঁচারা। —নিজস্ব চিত্র।
চলছে বিশ্ব ঐতিহ্য সপ্তাহ। চলতি মাসের ১৯ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত এই বিশেষ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে। এই উপলক্ষে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় হেরিটেজ সোসাইটির সদস্যরা স্থানীয় স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ২০০টি পোস্ট কার্ডে লেখা চিঠি পোস্ট হল বালুরঘাট মুখ্য ডাকঘর থেকে। সোসাইটির সদস্যদের দাবি, জেলায় কুশমন্ডি ব্লকের পিরপাল, গঙ্গারামপুরের বানগড়, পতিরামের সিংহ বাহিনী বা বালুরঘাটের নাট্যমন্দিরের মতো বহু পুরনো এবং ঐতিহ্যশালী নিদর্শন থাকলেও তা এখনও হেরিটেজ বা ঐতিহ্যের তকমা পায়নি। কালের গতির সঙ্গে ওই সমস্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়ার মুখে। সেগুলোকে সংরক্ষণ করার কোনও উপায় সাধারণ মানুষের হাতে নেই। কিন্তু সরকারি উদাসীনতার অভিযোগও রয়েছে প্রচুর। মাঝে জেলার পর্যটনকে উৎসাহ দিতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে একাধিক পদক্ষেপ করা হলেও ঐতিহ্য সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা হয়নি।
নতুন প্রজন্মকে ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্বন্ধে অবহিত করা এবং জেলার ইতিহাসকে সংরক্ষণের দাবিতে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সপ্তাহকে বেছে নিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের হেরিটেজ সোসাইটি সদস্যরা। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের যেমন জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির সম্বন্ধে ধারণা দেওয়ার কাজ চলছে, তেমনই ওই সমস্ত নিদর্শনকে দ্রুত হেরিটেজ তকমা দিয়ে সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আনার দাবি তুলছেন সংস্থার সদস্যরা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর থেকে হিলি, কুশমন্ডি থেকে বালুরঘাট— সর্বত্রই পুরনো নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য কিছু জায়গা রয়েছে। একশো বছরের বেশি ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বালুরঘাটের নাট্যমন্দির, কুশমন্ডির থানার মূল ভবন। কুশমন্ডি ব্লকের পিরপাল গ্রামে বক্তিয়ার খলজির সমাধি আছে। সমাধিস্থানের আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে নানা নিদর্শন। কিন্তু সরকারি কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি বখতিয়ার খলজির সমাধিস্থানকে সংরক্ষণ করার।
অন্য দিকে গঙ্গারামপুরের বানগড় স্থানীয় ভাবে বান রাজার রাজপ্রাসাদ ও তার ধ্বংসাবশেষ বলে পরিচিত হলেও মূলত এর পরিচয় রক্তদন্তিকা বিহার। বানগড়ে আগে দু’বার খনন কাজ চালিয়েছে ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ। কিন্তু এখন অবহেলায় পড়ে রয়েছে বানগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। একই অবস্থা সিংহবাহিনী মন্দিরের। বালুরঘাটের অন্যতম পরিচয় নাট্যচর্চা। কিন্তু নাট্যমন্দিরের মূল ভবন ১১০ বছর অতিক্রম করলেও তা ঐতিহ্যগত মান্যতা পায়নি। এ নিয়ে জেলার সোসাইটির সদস্য দীপক মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘সরকারি উদাসীনতার কারণেই ইতিহাস সমৃদ্ধ এই সমস্ত স্থান আগামিদিনে অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। তার বিবরণ হয়ত ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে। কিন্তু জেলার ছাত্রছাত্রীরা এগুলো আর চাক্ষুষ করতে পারবে না। তাই ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলে মিলে ২০০টি পোস্ট কার্ডে খোলা চিঠি লিখে দাবি জানালাম। দক্ষিণ দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসের সাক্ষী থাকা বিভিন্ন ভবন এবং স্থাপত্যকে হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়া হোক। শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, দক্ষিণ দিনাজপুর হেরিটেজ সোসাইটির সদস্যরা চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনকেও।’’