Coronavirus

১৩ দিনে পরের হাজার

করোনা নিয়ন্ত্রণে উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘রোগ সংক্রমণ বাড়বে, সেটা জানাই ছিল। কেন না প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফিরেছেন।”

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০৭:১৪
Share:

প্রচার: করোনা রুখতে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের তরফে। পাশাপাশি চলছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচারও। বুধবার শিলিগুড়ি শহরে। ছবি: বিনোদ দাস

প্রথম হাজার পার হতে সময় লেগেছিল ৭৫ দিন। পরের হাজার হতে লাগল মোটে ১৩ দিন। উত্তরবঙ্গে করোনা সংক্রমণ এত দ্রুত দু’হাজার পার হওয়ার পরে চিন্তিত চিকিৎসক মহল থেকে স্বাস্থ্য দফতর। তবে তাঁরা এ-ও বলছেন, পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে ৮৬৪ জন সুস্থ হয়েছেন। তাই সুস্থতার হারও যথেষ্ট ভাল। মৃত্যুর হারও উত্তরবঙ্গে এখনও কম। এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে মারা গিয়েছেন ২০ জন। যা মোট সংক্রমিতের ১ শতাংশের মতো।

Advertisement

করোনা নিয়ন্ত্রণে উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘রোগ সংক্রমণ বাড়বে, সেটা জানাই ছিল। কেন না প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফিরেছেন। তবে মৃত্যুর হার যাতে না বাড়ে, আক্রান্তরা যাতে সুস্থ হয়ে ওঠেন, সে দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসা এখন অনেকটাই কমেছে। তাই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যা জানা যাচ্ছে, তাতে জুলাই থেকে সংক্রমণের হারও কমার যথেষ্ট সম্ভাবনা।’’ এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোমর্বিডিটি একটা বড় কারণ বলেও তিনি দাবি করেন।

শুধু সুশান্তবাবুই নন, চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে আসাকে কেন্দ্র করেই উত্তরবঙ্গে করোনার হার দ্রুত বাড়তে শুরু করে। মালদহে অন্তত দেড় লক্ষ শ্রমিক, কোচবিহারে লক্ষাধিক বাড়ি শ্রমিক ফিরেছেন। তাঁদের অনেকেই এসেছেন মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশের মতো করোনা কবলিত রাজ্য থেকে। প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন দুই দিনাজপুর, জলপাইগুড়িতেও। তাঁরা ঢোকার পর থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হয় বলে প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য। একই ভাবে ভিন রাজ্যে থাকা পড়ুয়া, চিকিৎসা করাতে যাওয়া বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করলে তাঁদের অনেকের সংক্রমণ মেলে।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, গত ১০ জুন হাজার পার হয় সংক্রমিতের সংখ্যা। সে দিন দার্জিলিং জেলায় ছিল ১৫৮ জন আক্রান্ত। মঙ্গলবার পর্যন্ত হিসেবে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৪ জন। মালদহের ক্ষেত্রে এই সময়ে আক্রান্ত ২৩১ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪৬ জনে। মালদহে সুস্থ হওয়ার হারও অনেক বেশি এই সময়ে। ১০ জুন ১৪৪ জন সুস্থ হয়েছিলেন। এদিন পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০০ জনে। উত্তর দিনাজপুরে এই ১৩ দিনে ৪২ জন আরও আক্রান্ত হয়েছেন। জলপাইগুড়িতে এই ১৩ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই আক্রান্তদের বেশির ভাগই পরিযায়ী।

কী ভাবে রোগ প্রতিরোধ জোর দেওয়া হচ্ছে? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরতেই রোগ ‘ট্রেসিং’-এর উপর জোর দেওয়া হয়। লালারস পরীক্ষার উপরেও জোর দেওয়া হয়। তাতে অনেকের সংক্রমণ ধরা পড়ে। আক্রান্তদের কোভিড হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। দ্রুত চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে কোভিড হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়ানো হয়। শুরুতে শিলিগুড়িতে মাটিগাড়ায় কোভিড হাসপাতাল চালু করা গোটা উত্তরবঙ্গের জন্য। পরে একে একে মালদহ, রায়গঞ্জ ও আলিপুরদুয়ারে কোভিড হাসপাতাল খোলা হয়। শিলিগুড়িতে দ্বিতীয় কোভিড হাসপাতাল চালু হয়।

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ উপসর্গহীন রোগী। তাঁরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। তাই তাঁদের কোভিড হাসপাতালে না রেখে আলাদা জায়গায় রাখতে ‘সেফ হাউস’ ব্যবস্থা চালু করা হয়। কোভিড হাসপাতালগুলিকে মূলত জটিল পরিস্থিতি যাঁদের, তাঁদের চিকিৎসার জন্য আলাদা রাখা হয়েছে।

সেই সঙ্গে নার্সিংহোমগুলিতেও কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে এখনও সে ভাবে সাড়া মেলেনি। দিন কয়েক আগে উত্তরকন্যায় বৈঠক করে দ্রুত তাঁদের সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement