বেরোচ্ছেন রসিক। নিজস্ব চিত্র।
শতবর্ষে জেলের বাইরে পা রাখলেন রসিকচন্দ্র মণ্ডল।
মালদহ জেল থেকে তাঁকে নিয়ে হইচই করতে করতে নাতি-পুতির দল ফিরিয়ে নিয়ে গেল বাড়ি। প্যারোলে ছাড়া পেয়েছেন রসিক। প্যারোলের এক মাসের মেয়াদ শেষ হলে জেলে ফিরতে হবে তাঁকে। রসিকের বিরুদ্ধে নিজের ভাইকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ১৯৯২ সালে মালদহের আদালত বিচার-পর্ব শেষে রসিককে যাবজ্জীবনের নির্দেশ দেয়। তখনই রসিকের বয়স ৭২ বছর। হাইকোর্টে আবেদন করেন রসিক। ’৯২ সালেই জামিনও পেয়ে যান। তবে শুনানি চলতে থাকে। ২৬ বছর পরে শুনানির শেষে যাবজ্জীবন বহাল রাখে হাইকোর্ট। রসিককে জেলে ফিরে যেতে ২০১৮ সালে।
জেল সূত্রের খবর, করোনার আবহে লকডাউনের পর থেকে বহু বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু শতায়ু রসিক আটকে গিয়েছিলেন নিয়মের ফাঁসে। আইন বলছে, অন্য সব শর্ত পূরণ করলে একটানা দু’বছর বা তার চেয়ে বেশি যে বন্দিরা জেলে রয়েছেন, কেবল তাঁরাই এই সুবিধা পাচ্ছেন। প্যারোলে মুক্তির জন্য যে প্রস্তাবিত তালিকা আসে, তাতে রসিকের নাম ছিল। তাঁর বয়স দেখে চমকে যান কারা কর্তারা। কিন্তু দেখা যায়, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর মালদহ জেলে ঢুকেছেন রসিক। ফলে, তাঁর একটানা দুই বছরের মেয়াদ তখনও শেষ হয়নি।
কারা দফতরের এডিজি পীযূষ পান্ডে বলেন, “আমরা ওই দুই বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সেটা ৩০ নভেম্বর হয়েছে। ২ ডিসেম্বরই প্যারোল মঞ্জুর করে মালদহ সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে জরাজীর্ণ বৃদ্ধ মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বার হয়ে আসেন মালদহ সংশোধনাগার থেকে। স্পষ্ট কথা বলতে পারছিলেন না রসিক। আপনার বয়স কত? জোর গলায় বলে ওঠেন, ১০০ বছর। তাঁর স্ত্রী মিনা মণ্ডলের বয়স ৯২ বছর, দাবি পরিবারের। তাঁদের চার ছেলে এবং দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলের মৃত্যু হয়েছে। নাতি-নাতনিদেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রসিকের মেয়ে সুলেখা বলেন, “কাকাকে খুনের ঘটনায় বাবাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি জেল খাটছেন। বয়স হয়ে গিয়েছে। প্যারোলের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।” মানিকচকের পশ্চিম নারায়ণপুরে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন তাঁরা। তার আগে রসিক জানিয়ে গেলেন, “শেষ বয়সে পরিবারের সঙ্গে বাকি সময়টুকু কাটাতে চাই।” যদিও এক মাস পরেই জেলে ফিরতে হবে তাঁকে।