পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
পরিকল্পনা খাতে দফতরের বাজেট বরাদ্দ ৪৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু ইতিমধ্যেই ১২০৫ কোটি টাকার কাজের বরাত দিয়ে দেওয়া হয়েছে! সেই কাজের টাকা কোথা থেকে মেটানো হবে, তা নিয়ে তোলপাড় চলছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে। বেকায়দায় পড়ে নবান্নের নির্দেশ, উত্তরবঙ্গে আপাতত কোনও নতুন কাজের বরাত দেওয়া যাবে না।
পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তবে তিনি বলেন, ‘‘আগাম পরিকল্পনা করে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। দরপত্র চেয়ে যত কাজ শুরু হয়েছে, সবই শেষ হবে। কোনও কাজই বন্ধ হবে না।’’ তবে দফতরের খবর, নিয়মকানুন না-মেনে বেশ কিছু কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল। দফতরের সচিব তেমন কিছু কাজ ইতিমধ্যেই বাতিল করে দিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের উন্নয়নকে এক সময় পাখির চোখ করেছিল রাজ্য সরকার। তখন উত্তরবঙ্গের আটটি জেলায় যাবতীয় উন্নয়নের কাজ এই দফতরের মাধ্যমেই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে সেই উন্নয়নের গতি আরও বাড়াতে গিয়েই বিপত্তি বাধে বলে সরকারি কর্তাদের একাংশের দাবি। লোকসভা ভোটের ছ’আট মাস আগে উত্তরবঙ্গের জনপ্রতিনিধিরা যে-সব প্রকল্প নিয়ে এসেছিলেন, দফতর কার্যত সব ক’টিই মঞ্জুর করে দেয়। দফতরের সচিবকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থমূল্যের প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এ ভাবে অজস্র প্রকল্পের কাজের বরাত দিতে গিয়ে দেখা যায়, সব মিলিয়ে ১২০৫ কোটি টাকার ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। রাস্তা, বাস টার্মিনাস, বনবাংলো, ছোট সেতু থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির নীল-সাদা রং করানোর অর্থ— সবই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে বরাদ্দ করা হয়।
আরও পড়ুন: রাজ্যের সব জেলে কয়েদিদের খাবার কিনতে হবে ক্যাশলেস কার্ডে!
নবান্নের একাংশের প্রশ্ন, উত্তরবঙ্গের দফতর থেকে না-হয় বহু ছোট প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছে। কিন্তু ১০ কোটির বেশি টাকার যে-সব প্রকল্পের প্রস্তাব অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলো অনুমোদিত হল কী ভাবে? অর্থকর্তারা তো ই-অফিস থেকেই দফতরের বরাদ্দ এবং বরাতের হিসেব দেখতে পান। তা হলে কি সেই সময় ঢালাও প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়ে এখন ঢোক গিলছে অর্থ দফতর?
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, একেবারেই নিয়মবিধি না-মেনে বরাত দেওয়া কাজগুলি বাতিল করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যে-সব কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বা শুরু হওয়ার মুখে, সেগুলি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন কাজ শুরু করতে নিষেধ করেছেন বলে জানান ওই কর্তা। যে-সব কাজ হবে, তার খরচ মেটানো হবে এ বারের বাজেট বরাদ্দের ৪৫৫ কোটি টাকা থেকে। বাকি টাকা পাওয়ার জন্য ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে দু’তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানাচ্ছেন অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশ।