২০১৪ এবং ২০১৭ সালের টেট দিয়ে পাশ করা কোনও প্রার্থীই এখনও পর্যন্ত মার্কশিট বা শংসাপত্র পাননি। প্রতীকী ছবি।
আট বছর আগে পাশ করেছেন টেট। কিন্তু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারক সেই পরীক্ষার শংসাপত্র আজও মেলেনি! বস্তুত, ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের টেট দিয়ে পাশ করা কোনও প্রার্থীই এখনও পর্যন্ত মার্কশিট বা শংসাপত্র পাননি।
এই নিয়ে আদালতেও লড়াই দীর্ঘ কালের। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ টালবাহানা করে চলেছে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার পর্ষদের কৌঁসুলি কলকাতা হাই কোর্টে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছ থেকে ওই তথ্য পাওয়া যায়নি। এই জবাব শুনে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের শংসাপত্র দেওয়ার জন্য আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। তার মধ্যে কাজ না-হলে প্রয়োজনে ওই আধিকারিককে হাই কোর্টে হাজির করানোর জন্য তিনি সিবিআই-কে নির্দেশ দেবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।
জোড়া টেটের কোনও প্রার্থীই এখনও পর্যন্ত মার্কশিট বা শংসাপত্র পাননি কেন, রাজ্য সরকারের তরফে তার কোনও সদুত্তর দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, নম্বর জানা না-থাকায় প্রাথমিক
শিক্ষক নিয়োগের ফর্ম পূরণে সমস্যা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই মামলাটি এক বার উঠেছিল। সে-বার পর্ষদের কৌঁসুলি প্রার্থীদের দাবি ন্যায্য বলে মেনে নিয়ে সময় চেয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী শুক্রবার ফের সেই মামলা ওঠে। এ দিন পর্ষদের কৌঁসুলি জানান, ২০১৭ সালের তথ্য তাঁরা আগামী সোমবারের মধ্যে দিতে পারবেন। কিন্তু ২০১৪ সালের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা জানান তিনি।
এই শংসাপত্র না-পাওয়া নিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। অচিন্ত্য ধাড়া নামে ২০১৪ সালের টেটের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমরা, যারা ২০১৪ বা ২০১৭ সালের টেট পাশ করেছি, তাদের কেউই টেট সার্টিফিকেট পাইনি। মামলা করেছি। এই মামলা চার বছর ধরে চলছে। আদালত রায় দিয়েছে, টেট সার্টিফিকেট দিতে হবে। পর্ষদ ‘দিচ্ছি দেব’ করছে। কিন্তু দিচ্ছে না।’’ ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষার্থী শাহরূপ আলম বলেন, ‘‘আমরাও কেউই টেট সার্টিফিকেট পাইনি। টেট সার্টিফিকেট পেলে বেসরকারি স্কুলগুলিতেও চাকরির সুবিধা হয়।’’
প্রশ্ন উঠছে, কেউ টেট যদি পাশ করে থাকেন, তা হলে শংসাপত্র দিতে এত টালবাহানা কেন? এখানেই অনেকের সন্দেহ, নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় কি তা হলে টেটেই নিহিত রয়েছে? শংসাপত্র বেরোলেই কি ঝুলি থেকে বেড়াল পুরো বেরিয়ে পড়বে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেরই বক্তব্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ গোড়া থেকেই শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে যে-ধরনের মনোভাব দেখিয়েছে এবং শংসাপত্র দেওয়ার বিরুদ্ধে যে-ভাবে সক্রিয় ছিল, তাতে সন্দেহ হয়েছিল আগেই। ক্রমাগত সেই সন্দেহ জোরালো হচ্ছে বলে চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ।