মৌসম নুর এবং দীনেশ বজাজ।
মনোনয়নের জটে আটকে থাকল রাজ্যসভার দুই প্রার্থীর ভাগ্য। তৃণমূলের মৌসম বেনজির নূর ও তৃণমূল সমর্থিত নির্দল প্রার্থী দীনেশ বজাজের মনোনয়ন ও হলফনামার কাগজপত্রে অসম্পূর্ণতা এবং ‘তথ্য গোপনে’র অভিযোগ উঠেছে। তার প্রেক্ষিতে আজ, মঙ্গলবার দুই প্রার্থীকে আবার শুনানিতে ডেকেছে নির্বাচন দফতর। তার ফলে রাজ্যসভার পাঁচ আসনে কত জন প্রার্থী থাকবেন এবং ভোট করতে হবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
রাজ্যসভার ভোটের জন্য মনোনয়নপত্রের স্ক্রুটিনির দিন ছিল সোমবার। মনোনয়ন-পর্ব শেষ হওয়ার পরেই প্রার্থীদের হলফনামা ওয়েবসাইটে আপলোড করেছিল নির্বাচন কমিশন। তখনই রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা শুরু হয়, দুই প্রার্থীর নথিপত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে। স্ক্রুটিনি-পর্বে এ দিন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী ও বিরোধী দল কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী হলফনামা দিয়ে দুই প্রার্থীর মনোনয়নে ত্রুটির অভিযোগ তোলেন। এক দফা শুনানির পরে বিধানসভার সচিব তথা রাজ্যসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অভিজিৎ সোম দ্বিতীয় দফায় আজ ফের শুনানি হবে বলে জানিয়ে দেন। স্ক্রুটিনি-পর্বে এ দিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাবও। বাকি চার প্রার্থী, তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী, সুব্রত বক্সী ও অর্পিতা ঘোষ এবং সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মনোনয়নপত্রের স্ক্রুটিনি অবশ্য নির্বিঘ্নে মিটে গিয়েছে।
নির্দল প্রার্থী দীনেশের হলফনামায় নোটারির সিল নেই। অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষিতে এ দিন স্ক্রুটিনির সময়ে দীনেশ আবার নোটারির সিল-সমেত হলফনামা জমা দেন। সিপিএম প্রার্থী ও আইনজীবী বিকাশবাবু প্রশ্ন তোলেন, তিন বছর আগে তাঁর অতিরিক্ত হলফনামা দিতে কয়েক মিনিট দেরি হয়েছে— এই অভিযোগে মনোনয়ন খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। তা হলে এখন মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় (১৩ মার্চ) পেরিয়ে যাওয়ার পরে অন্য দিনে আবার হলফনামা নেওয়া হবে কেন? মৌসমের ক্ষেত্রে অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে রুজু থাকা মামলা এবং সম্পত্তির তথ্য মনোনয়নে সম্পূর্ণ নয়। এই সব বিষয়েই আজ পৃথক ভাবে শুনানির সময় ধার্য হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের কাছে মৌসম পরে আর্জি জানিয়েছেন, তিনি আরও দুই আইনজীবীকে আজ শুনানিতে সঙ্গে নিয়ে যেতে চান।
তৃণমূলের তরফে রাজ্যসভার প্রার্থীদের মনোনয়ন দেখভাল করার দায়িত্ব ছিল পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায়, সরকারি মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, পরিষদীয় দলের সচিব সমীর চক্রবর্তীদের উপরে। তবে তাঁরা কেউই ‘নির্দল’ দীনেশের বিষয়ে দায়িত্ব নিতে নারাজ। তাপসবাবুর বক্তব্য, ‘‘মৌসম একটা সংস্থার শেয়ার হোল্ডার, যেখান থেকে উনি ডিভিডেন্ড পান না। তাই ওই বিষয়ে আলাদা করে কিছু জানাননি। আশা করছি, ওঁর মনোনয়ন আটকাবে না।’’ দীনেশের বক্তব্য, শেষ মুহূর্তে প্রার্থী হওয়ার ‘সঙ্কেত’ পেয়ে তাঁর পক্ষে যা নথিপত্র দেওয়া সম্ভব ছিল, তা-ই দিয়েছিলেন।
শুনানির দ্বিতীয় পর্বের জন্যই এখন অপেক্ষায় বিরোধীরা। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘ত্রুটির কারণে দুই প্রার্থীরই মনোনয়ন বাতিল হওয়া উচিত। আর যদি ভোট হয়, আমরা তৃণমূলকে জবাব দিতে তৈরি আছি।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘আমাদের বক্তব্য স্ক্রুটিনিতে জানিয়েছি। এখন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’’