বিভিন্ন জেলায় সরকার পোষিত গ্রন্থাগারগুলিতে ৭৩৮টি শূন্য পদে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ফাইল চিত্র।
গ্রন্থাগারিক থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীর অভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সরকারি গ্রন্থাগারগুলি একের পর এক অকেজো হয়ে যাচ্ছে। অথচ সেই সব জায়গায় শূন্য পদ পূরণের জন্য নবান্নের তরফে বিশেষ কোনও উদ্যোগই নেই। নিয়োগ-দুর্নীতির জেরে স্কুলে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যেই নিয়োগ বিতর্কের সুতোয় এ বার নাম জড়িয়ে গেল রাজ্যের গ্রন্থাগার দফতরের।
একুশ মাস আগে অর্থ দফতরের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে বিভিন্ন জেলায় সরকার পোষিত গ্রন্থাগারগুলিতে ৭৩৮টি শূন্য পদে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সরকারি নির্দেশিকায় নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ের উল্লেখ করে জানানো হয়েছিল, ‘সার্চ কমিটি’ বা সন্ধান কমিটি গঠন থেকে মূল তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও গ্রন্থাগার দফতর এখনও সেই সন্ধান কমিটিই গড়ে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ। নিয়োগ হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে গ্রন্থাগার দফতরের এক শীর্ষ কর্তা শুধু বলেন, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি চলছে।’’
রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী গ্রন্থাগারবিদ্যার পাঠ নিয়ে পাশ করা সত্ত্বেও সরকারি চাকরির দুয়ার তাঁদের কাছে বন্ধই রয়ে গিয়েছে। রাজ্যের জনসাধারণের গ্রন্থাগার কর্মী কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা তথা রাজ্য কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘সরকারের এখন হাঁড়ির হাল। যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের প্রশ্ন উঠলেই ‘প্রক্রিয়া’ চলছে বলে দায় এড়াচ্ছে নবান্ন।’’
নবান্ন সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের অন্যান্য দফতরের মতো গ্রান্থাগার দফতরেও নিয়োগ থমকে আছে কয়েক বছর ধরে। অথচ সেখানে চার হাজারেরও বেশি পদ শূন্য। গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চোধুরী মে মাসে বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে ঘোষণা করেছিলেন, সরকারি গ্রন্থাগারে শীঘ্রই শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, গ্রন্থাগারগুলিতে গ্রন্থাগারিকের শূন্য পদের সংখ্যাই ৭৩৮। মন্ত্রীর ঘোষণার পরে ছ’মাস কেটে গিয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি এখনও চলছে!
গ্রন্থাগার দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রায় ২৪৮০টি গ্রন্থাগারের মধ্যে ১২০০টিরও বেশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে কর্মীর অভাবে। খুঁড়িয়ে চলা বাকি গ্রন্থাগারগুলির অধিকাংশই এখন ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’। মনোজের দাবি, ‘‘ওই সব কেন্দ্র কার্যত সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রচারের কাজ করে। সেখানে বই নেই, নিত্যকার খবরের কাগজও আর পৌঁছয় না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘ডিজিটাইজ়ড’ করার নামে মানুষের বই পড়ার অভ্যাসেই দাঁড়ি টেনে দেওয়া হচ্ছে। কোনও ক্রমে খুঁড়িয়ে চলা এক জেলা গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিকের কথায়, ‘‘এখন এক জন লাইব্রেরিয়ানের ঘাড়ে তিন-চারটি লাইব্রেরির দায়। নিয়োগ নেই, বই নেই, সংবাদপত্র নেই। অথচ গ্রামীণ মানুষের কাছে এখনও বই এবং খবরের কাগজের চাহিদা আছে।’’
গ্রন্থাগার আন্দোলনের সঙ্গে বহু দিন ধরে যুক্ত আছেন সুকোমল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘বহু গ্রামীণ মানুষের কাছে সরকারি গ্রন্থাগার এখনও সকালের কাগজ পড়ার জায়গা। অনেক ছাত্রছাত্রীর কাছে রেফারেন্স বইয়ের ভরসাস্থল সরকারি গ্রন্থাগার। অথচ গত সাত-আট বছর ধরে কর্মীর অভাবে সেই গ্রন্থাগারগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’’