একে মাছের আকাল। সঙ্গে দোসর, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার উপরে প্রলম্বিত ফতোয়া।
এই জোড়া ফাঁসে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া মৎস্যজীবীদের দাবি ছিল এই ‘শুখা’ মরসুমে বিকল্প কোনও রুজির উপায় দেখাক রাজ্য সরকার। সোমবার সে বিষয়ে আলোচনায় বসে কিন্তু হোঁচট খাচ্ছে সরকার।
এ ব্যাপারে রাজ্যের মৎস্যজীবীদের তালিকাই তৈরি করতে পারেনি সরকার। এমনই দাবি মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির।
এ দিন, ডায়মন্ড হারবারে রাজ্যের মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে সেই তালিকা নিয়েই বিভ্রান্তিতে পড়েছে মৎস্য দফতর বলে ওই দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন।
এ দিন বায়োমেট্রিক কার্ডের জন্য মৎস্যজীবীদের করা প্রায় ৪৩ হাজার আবেদনপত্রও বাতিল করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর।
মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির দাবি ছিল, এই শুখা মরসুমে তাদের জন্য বিকল্প কোনও রুজির ব্যবস্থা হোক, সে ব্যাপারেও বিশেষ সাড়া মেলেনি বলেই সংগঠনগুলির দাবি।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির তরফে বিজন মাইতি প্রস্তাব ছিল, মৎস্যজীবীদের মাসে ২ হাজার টাকা এবং ৬০ কিলো করে চাল দেওয়া হোক। কিন্তু মৎস্য দফতরের কর্তারা কী করে এগোবেন তা বুঝতেই পারছেন না কর্তারা। কারণ কর্তাদের হাতে মৎস্যজীবীদের কোনও সুস্পষ্ট তালিকা নেই।
মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘কারা মৎস্যজীবী তা নিয়ে এ যাবত কোনও সমীক্ষা হয়নি।’’ মৎস্যজীবীদের জন্য বেশির ভাগ প্রকল্পের টাকা আসে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু তা সুষ্ঠু ভাবে খরচা করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে ওই তালিকা।
রাজ্যে আসল মৎস্যজীবী কারা তা চিহ্নিত করার জন্যই মুম্বই তাজ হামলার পর শুরু হয়েছিল মৎস্যজীবীদের বায়োমেট্রিক কার্ড তৈরির প্রকল্প। মাছের মরসুম বন্ধ থাকলে মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন সুবিধা দিতেও এই কার্ডই সহায়ক। কিন্তু বেশ কয়েক বার প্রচার করেও সব মৎস্যজীবীর ছবি তোলানো সম্ভব হয়নি। তাই এ দিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বায়োমেট্রিক কার্ডের প্রায় ৪৩ হাজার আবদেনপত্র বাতিল করা হবে। শীঘ্রই নতুন করে আবার বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে বলে আস্বাস দেওয়া হলেও তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মৎস্যজীবীদের মধ্যেই।
সুলতানপুরের ‘মা গঙ্গা মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতি’র মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের সমিতির তরফে প্রায় সাড়ে তিনশোর বেশি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। সেগুলি বাতিল করা হল কোন যুক্তিতে?’’ এমনই অভিযোগ করেছেন অন্য সংগঠনের নেতারাও।
শুখা মরসুমে মৎস্যজীবীদের জন্য সেভিংস কাম রিলিফ স্কিমে একজন মৎস্যজীবী সারা বছরে ৬০০ টাকা দেন। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারও একইভাবে ৬০০ টাকা করে দেবে। কিন্তু রাজ্য থেকে গত দু’বছরে কোনও আবেদনই জমা পড়েনি। এখানে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিপিএল কার্ড। রাজ্যে এখনএ বিপিএল তালিকা তৈরি হয়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও এ রকম অনেক মৎস্যজীবী রয়ে গিয়েছেন, যাদের ওই প্রহকল্পের সুযোগ পাননি। ফলে বিকল্প জীবিকা, সরাসরি আর্থিক সহায়তা বা কেন্দ্রীয় অনুদান কোনওটার সুযোগই এ বছর নিষেধাজ্ঞার মরসুমে নিতে পারবেন না বেশিরভাগ মৎস্যজীবী।