Unhappy

রাজ্য কমিটিতে ঢুকে খুশি নন? কাননে নতুন অস্বস্তি বিজেপির

রাজ্য বিজেপির এই কর্মসমিতিতে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অন্তর্ভুক্তি নজর কেড়েছে রাজনৈতিক শিবিরের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:৫২
Share:

শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছবি– সংগৃহীত।

এ বারেও কাটল না অস্বস্তি। মঙ্গলবার বেশ চমকে দিয়েই শোভন চট্টোপাধ্যায়কে রাজ্য কর্মসমিতির সদস্য করল বিজেপি। কিন্তু তাতে অস্বস্তির আবহ কাটল তো না-ই, বরং মাথাচাড়া দিল নতুন জটিলতা। এই অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কেউ কোনও আলোচনাই করেননি, জানালেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ মঙ্গলবার দলের পূর্ণাঙ্গ কর্মসমিতি অনুমোদন করেছেন। পদাধিকারী, পদাধিকারী মণ্ডলীতে বিশেষ আমন্ত্রিত, কর্মসমিতিতে বিশেষ আমন্ত্রিত এবং কর্মসমিতিতে স্থায়ী আমন্ত্রিত মিলিয়ে মোট ২৩০ জনের নামের তালিকা এ দিন বিজেপির তরফে প্রকাশ করা হয়েছে। পরে রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু দলের রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কর্মসমিতি গঠনের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছেন।

রাজ্য বিজেপির এই কর্মসমিতিতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অন্তর্ভুক্তি নজর কেড়েছে রাজনৈতিক শিবিরের। শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় গত বছরের ১৪ অগস্ট দিল্লিতে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন, সে কথা ঠিক, কিন্তু তাঁদের যোগদানের দিন থেকেই অশান্তি শুরু হয়েছিল। শোভন ও বৈশাখী সে দিন দিল্লির বিজেপি দফতরে আর এক তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়কে দেখে স্তম্ভিত হয়েছিলেন। দেবশ্রী-ও তাঁদের সঙ্গেই বিজেপিতে যোগ দিন, এমনটা তাঁরা চান না বলে বিজেপি নেতৃত্বকে সে দিনই তাঁরা জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেবশ্রীর যোগদান আটকে গিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে শোভনদের বাগ্‌যুদ্ধ বেশ কয়েক দিন চলেছিল। কলকাতায় ফিরে রাজ্য বিজেপির দফতরে শোভন ও বৈশাখী সংবর্ধনা নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রথম, সেই শেষ। শোভন-বৈশাখী তার পর থেকে আর এক বারও বিজেপির রাজ্য দফতরে যাননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই চলবে কলকাতা মেট্রো, প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন জিএম

এর পর থেকে একনাগাড়ে অস্বস্তির আবহই বহাল থেকেছে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে। শোভনকে একেবারেই বিজেপির হয়ে ময়দানে নামতে দেখা যায়নি। বরং কখনও ভাইফোঁটা নিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে, কখনও মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে চলচ্চিত্র উৎসবের আসরে হাজির হতে দেখা গিয়েছিল। শোভন ‘ঘরে’ ফিরতে পারেন ভেবে তৃণমূল নেতৃত্বও নিরন্তর যোগাযোগ রেখে যাচ্ছিলেন বৈশাখীর সঙ্গে। বেশ কয়েক বার তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বও তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তবে হাল ছেড়ে দিতে রাজি হয়নি বিজেপি-ও। দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ তো বটেই, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন শোভন ও বৈশাখীর সঙ্গে। অগস্টে শোভনের ঘর-ওয়াপসির জল্পনা তুঙ্গে উঠতেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন হাজির হয়ে গিয়েছিলেন শোভনের বাড়িতে। আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করে গভীর রাতে বেরিয়েছিলেন।

অরবিন্দ মেননের সঙ্গে শোভনের বৈঠকের পরে ‘হাওয়া ঘুরেছে’ বলে বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল। শোভনের সক্রিয়তা আসন্ন বলে আভাস দেওয়া শুরু হয়েছিল। শোভন নিজেও আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, তিনি বিজেপি ছেড়ে দেননি। কিন্তু এত কিছুর পরেও জট কাটল না। বরং শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দিলীপ ঘোষ দলের রাজ্য কর্মসমিতির অন্তর্ভুক্ত করতেই আরও জটিল হয়ে উঠল পরিস্থিতি।

বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ‘স্থায়ী আমন্ত্রিত’ হিসেবে কর্মসমিতিতে ঢোকানো হয়েছে। সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘দলে এই মুহূ্র্তে যত জন সাংসদ এবং বিধায়ক রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই কর্মসমিতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় একজন বিধায়ক এবং তিনি দলেই রয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তিনিও কর্মসমিতিতেই থাকবেন।’’ কিন্তু কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে শুধু একজন ‘স্থায়ী আমন্ত্রিত’ সদস্য হিসেবে কর্মসমিতিতে নেওয়া হল কেন? সায়ন্তন বলেন, ‘‘সব বিধায়ক এবং সাংসদকেই কর্মসমিতিতে নেওয়া হয়েছে। শোভনবাবু বিধায়ক হিসেবেই এসেছেন। স্থায়ী আমন্ত্রিত হিসেবে এসেছেন বলে কর্মসমিতির অন্য সদস্যের সঙ্গে তাঁর কোনও প্রভেদ রয়েছে, এমন নয়।’’

প্রভেদ রয়েছে কি না, তা নিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু কর্মসমিতির সদস্য হিসেবে আচমকা যে ভাবে তাঁর নাম ঘোষিত হল, তাতে যে তিনি বিস্মিত, শোভনের নানা কথাতেই তার ইঙ্গিত মিলেছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, ‘‘এই বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে কেউ কোনও আলোচনা করেননি। যা জানতে পারছি, সে সব তো সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জানতে পারছি।’’ এই অন্তর্ভুক্তিতে কি তিনি খুশি নন? শোভন সরাসরি সে প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি। তবে ইঙ্গিতবহ ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘‘শিবপ্রকাশজি, অরবিন্দ মেননজি-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আমার বক্তব্য আমি খুব নির্দিষ্ট ভাবে তাঁদের জানিয়েছিলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’’

আরও পড়ুন: মাদক-যোগে গ্রেফতার রিয়া, ভিডিয়ো কনফারেন্সে আদালতে পেশ আজই

শিবপ্রকাশ বা মেননদের সঙ্গে তাঁর যে কথা হয়েছিল, রাজ্য বিজেপির এ দিনের ঘোষণা কি তার সঙ্গে মিলছে না? তাঁকে কি অন্য কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, যার সঙ্গে এ দিনের ঘোষণার কোনও মিলই নেই? জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। তবে বলেছেন, ‘‘একটা কথাই বলব, সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে দল চালানো যায় না। দলের কথা বা বার্তা জনগণকে জানানোর জন্য সংবাদমাধ্যমকে কাজে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কাজকর্ম পরিচালনা করা যায় না।’’ এই মন্তব্য করতে গিয়ে কারও নাম শোভন উচ্চারণ করেননি, সে কথা ঠিক। কিন্তু রাজ্য কর্মসমিতিতে তাঁর অন্তর্ভুক্তির খবর সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে পেয়ে যে তিনি মোটেই খুশি নন, সে ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট ভাবেই এ দিন দিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement