বেতন কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই এই পুনর্গঠন। —ফাইল চিত্র।
বেতন কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়ার মুখে পুনর্গঠিত হল কর্মী সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ। কংগ্রেস এবং বিজেপির ছাতার তলায় থাকা দুই সংগঠনের প্রতিনিধিরা তো বটেই, আরও সাতটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের শামিল করা হল রাজ্য সরকারি কর্মীদের যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের কমিটিতে। বেতন সংস্কার, কেন্দ্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়া এবং শূন্য পদগুলিতে স্থায়ী নিয়োগের দাবি মঞ্চের অ্যাড হক কমিটির এই পুনর্গঠন বৃহত্তর কর্মী আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখল বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
বাম জমানায় দোর্দণ্ড প্রতাপ কর্মী ইউনিয়ন কোঅর্ডিনেশন কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে মাথা তুলেছিল যে ‘নবপর্যায়’, তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফটিক দে-কে এই নতুন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে বিজেপির সংগঠন ‘রাজ্য সরকারি কর্মচারী পরিষদ’-এর নেতা দেবাশিস শীলকে। কলকাতা পুরসভার কর্মীদের একটি প্রভাবশালী সংগঠনের নেতা অমল সান্যালকে কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসের সরকারি কর্মী সংগঠন ‘কনফেডারেশন’-এর নেতা সুবীর সাহা।
তৃণমূলের সংগঠন ‘ফেডারেশন’ বা সিপিএমের ‘কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র কেউ এই মঞ্চে শামিল হননি। তবে রাজ্য সরকারের কর্মী, পুরসভার কর্মী এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের মোট ৯টি সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চে শামিল হয়েছে বলে নবগঠিত কমিটির তরফে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেতন বৃদ্ধি নিয়ে পার্থর ঘোষণায় ‘বিভ্রান্তি’, অনশনে অনড় প্রাথমিক শিক্ষকরা
চলতি মাসেই বেতন কমিশনের সুপারিশ নবান্নে জমা পড়ছে বলে জানা গিয়েছে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই কর্মীদের নতুন বেতন কাঠামো স্থির করবে রাজ্য সরকার। কিন্তু বেতন কমিশনের সুপারিশ ঠিক কী রকম হতে চলেছে, তার রূপায়ণই বা কতটা হতে চলেছে, তা নিয়ে কর্মী মহলে সংশয় রয়েছে। কমিশন সূত্রে কর্মী সংগঠনগুলি খবর পেয়েছিল যে, কেন্দ্রীয় হারেই বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হবে। কিন্তু একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, বেতন কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পরে তিনি ‘সাধ্যমতো’ করবেন। এই ‘সাধ্যমতো’ শব্দটিই সংশয় তৈরি করেছে কর্মীদের মধ্যে। তা হলে কি কমিশন কেন্দ্রীয় হারে বেতন সংস্কারের সুপারিশ করলেও তা রূপায়িত হবে না? তৈরি হয়েছে প্রশ্নচিহ্ন।
আরও পড়ুন: বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে লোকসভায় পাশ তিন তালাক বিল, সংশয় রাজ্যসভায়
এই পরিস্থিতিতে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের অ্যাড হক কমিটির পুনর্গঠন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নতুন বেতন কাঠামো যদি সন্তোষজনক না হয় এবং বর্ধিত বেতনের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি তারিখ থেকে নতুন বেতন হাতে পাওয়া পর্যন্ত বকেয়া হওয়া সব টাকা যদি মিটিয়ে দেওয়া না হয়, তা হলে ৯টি সংগঠন একসঙ্গে আন্দোলনে নামতে পারে— এই বার্তাই রাজ্য সরকারকে দেওয়ার চেষ্টা হল বলে রাজনৈতিক শিবির মনে করছে।