Burdwan

প্রয়াত বাম নেতা নিখিলানন্দ সর

শুক্রবার ভোরে বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুরের বাড়িতে প্রয়াত হন ৮৪ বছরের নিখিলানন্দবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০২:০০
Share:

নিখিলানন্দ সর। নিজস্ব চিত্র

প্রয়াত হলেন অবিভক্ত বর্ধমানের বিশিষ্ট বাম নেতা নিখিলানন্দ সর। তিন বারের সাংসদ, বিধায়ক ছিলেন তিনি। কৃষক আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। শুক্রবার ভোরে বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুরের বাড়িতে প্রয়াত হন ৮৪ বছরের নিখিলানন্দবাবু। বয়সজনিত অসুখে ভুগছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, শেষ কয়েক বছর রাজনীতি থেকে দূরেই ছিলেন তিনি। দলের প্রাথমিক সদস্য পদও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর দূরে থাকা নিয়েও কম বিতর্ক ছিল না সিপিএমে। এ দিন দলের জেলা দফতরে নেতার দেহ আনা হয়নি। তবে প্রয়াত নেতার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন সিপিএমের বর্তমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। বাজেপ্রতাপপুরের বাড়িতে ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন সিপিএমের নেতা, প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হক, সুকান্ত কোনার, গণেশ চৌধুরী, দুর্যোধন সর, সাজাহান চৌধুরীরা। শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

Advertisement

১৯৩৬ সালের ৩০ জুলাই মঙ্গলকোটের নিগন গ্রামে নিখিলানন্দবাবুর জন্ম। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন। সিপিএম সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৮ সাল থেকে কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। পরে ভাতারের আমারুন হাইস্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মঙ্গলকোটের যবগ্রাম হাইস্কুলেও শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৯ সালে মঙ্গলকোট বিধানসভায় জয়ী হন। ১৯৭১ সালেও বিধানসভা ভোটে জেতেন। এ দিন তাঁর আত্মীয়, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দুর্যোধন সর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, “সাতের দশকে একের পরে এক মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয় ওঁকে। সাঁওতা গ্রামের কাছে বর্ধমানে ছোট লাইন ট্রেনে খুন হয়েছিলেন এক জোতদার। সেই মামলায় তিন অভিযুক্তের মধ্যে এক জনের ফাঁসি ও আর এক জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের হয়। তখন আত্মগোপন করেছিলেন নিখিলানন্দ। পরে কলকাতা হাইকোর্ট ওই মামলায় সবাইকে বেকসুর খালাস দেয়।’’ জানা যায়, ওই সময়ে গুজরাতের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন ওই নেতা। পঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশেও থেকেছেন। আবার ছদ্মনামে বর্ধমানে এসে কৃষক-আন্দোলনের পটভূমিও তৈরি করে গিয়েছেন। ১৯৭৭ সালে ফের মঙ্গলকোটের বিধায়ক হন তিনি। টানা তিন বার বিধায়ক ছিলেন। ১৯৯১ সালের পরে, তন্তুজের চেয়ারম্যান হন। ১৯৯৫ সালে অবিভক্ত বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন। ১৯৯৮, ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে তৎকালীন বর্ধমান কেন্দ্রের সাংসদও ছিলেন। সেই সময়ে ভোটে তাঁর বড় ব্যবধানে জয় আলোচনার বিষয় হত। দলীয় স্তরে আটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি অবিভক্ত বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তাঁর দায়িত্বে ছিল কাটোয়া।

মৃত্যুর আগের দিনই জন্মদিন ছিল ওই নেতার। তবে কোনও দিনই আড়ম্বর পছন্দ করতেন না। ছোট ছেলে সব্যসাচী সর বলেন, “জন্মদিনে বাবাকে এক চামচ পায়েস দেওয়া হয়েছিল। রাজনীতি নিয়ে বিশেষ আলোচনাও করতেন না শেষ দিকে।’’ এ দিন দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ভাতার, মঙ্গলকোট, কাটোয়ার বিভিন্ন মোড়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান অনেক মানুষ। সুবোধ স্মৃতি রোডে সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির দফতরে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলকোটের প্রাক্তন বিধায়ক সাধনা মল্লিকরা। কাটোয়ায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement