এর্নাকুলাম থেকে ধৃত মুর্শিদ হাসানের বাড়ির রান্নাঘরে উনুন থেকে নামেনি খাবার। ছবি: সাফিউল্লা উসলাম
বুুদ্ধগয়া থেকে বর্ধমানের খাগড়াগড়। সর্বত্রই বিস্ফোরণ কাণ্ডে অতীতে বার বার নাম উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদের। এ বার আল কায়দার সঙ্গে জঙ্গি-যোগেরও অভিযোগ উঠল।এর আগেও এনআইএ এই জেলায় অভিযান চালিয়েছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে জঙ্গিপুরে হানা দিয়েছে এনআইএ, কখনও লালগোলা ও বেলডাঙায়ও। কখনও বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে মাস্টারমাইন্ডদের খোঁজে কলকাতা টাস্ক ফোর্স হানা দিয়েছে শমসেরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে। ইতিমধ্যেই খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ৮ বছর করে কারাদণ্ডে খাটছে জঙ্গিপুরের রেজাউল করিম ও শমসেরগঞ্জের আব্দুল অহব মোমিন। খাগড়াগড় কাণ্ডে যে ১৯ জন দোষ স্বীকার করেছিল, তাদের মধ্যেই রয়েছে এই দুজনও। বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে ধৃত শমসেরগঞ্জের ৬ জন এখনও বিচারাধীন বন্দি হিসেবে জেল হেফাজতে রয়েছে ।
অথচ স্থানীয় এলাকায় নেহাতই ভাল মানুষের ভাবমূর্তি ছিল সকলেরই। জঙ্গিপুরের খোদারামপুরের ভূতবাগান পল্লিই বছর ৩০ বয়সের রেজাউল করিমের আসল বাড়ি। বাবার হাত ধরেই রেজাউল যায় বর্ধমানে রাজমিস্ত্রির কাজে। দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন বর্ধমান শহরে। নিজেই জমি কিনে বাড়ি করেন বর্ধমানের বাদশাহী রোডে মাঠপাড়ায়। ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে এনআইএ’র অফিসারেরা ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে রেজাউলকে।
শমসেরগঞ্জ থানার নামো চাচণ্ড গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল অহাব মোমিন পেশায় রাজমিস্ত্রি। গ্রামেই জাতীয় সড়কের পাশে মুড়ি মিল লাগোয়া টালির বাড়ি। খাগড়াগড় কাণ্ডের পর থেকেই ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গা ঢাকা দেয় অহাব। এনআইএ’র দল তার বাড়িতে হানাও দেয় একাধিক বার। গ্রামে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে পরিচিতি ছিল অহাবের। তাকে এনআইএ গ্রেফতার করে ২১ মার্চ ২০১৫ সালে। তার বিরুদ্ধে এনআইএ’র অভিযোগ শিমুলিয়া ও মুকিমনগর মাদ্রাসা ও বোলপুরের এক মসজিদে অভিযুক্ত কট্টর জঙ্গি মহম্মদ ইউসুফের নির্দেশে প্রশিক্ষণ দিয়েছে জঙ্গিদের। এমনকি পিস্তল চালানো, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণও দিত সে। তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নাসিরুল্লা ও শাকিল গাজির। শুধু তাই নয়, সাদিক সুমন নামে এক বাংলাদেশি জেএমবি নেতাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে সেখান থেকে ধুলিয়ান এলাকায় জেএমবি’র হয়ে প্রচারও করে।
খাগড়াগড় কাণ্ডে মারা যায় শাকিল আহমেদ। এই ব্যক্তি বসবাস করত বেলডাঙার বড়ুয়া, হাটপাড়া ইত্যাদি স্থানে। তার সঙ্গে ছিল সোহেল মাফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা। ২০১৯ সালের নভেম্বরে নাসিরুল্লা বাংলাদেশে নাশকতার ঘটনায় জড়িয়ে ধরা পরে। বেলডাঙায় তারা হাটপাড়া, বড়ুয়ার ফরাজিপাড়া ও পাওয়ার হাউসপাড়ায় ভাড়া ছিল। বড়ুয়ায় একটা মার্কেট কমপ্লেক্সে নাশকতার গোপন করতে বোরখা ঘর নাম দিয়ে, বোরখার একটা ব্যবসাও শুরু করেছিল। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে এনআইএ’র ডিজি স্বয়ং নিজেই দু’দুবার এসেছেন মুর্শিদাবাদে।
বুদ্ধগয়া বোমা বিস্ফোরণে ফাঁসিদেওয়া থেকে প্রথম ধরা পড়ে শমসেরগঞ্জের রতনপুরের জামিরুল সেখ নামে একজন। সেই সূত্র ধরেই কাঁকুড়িয়া গ্রাম থেকে পয়গম্বর সেখ নামে এক শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়। এলিজাবেদ গ্রাম থেকে ধরা হয় শিস মহম্মদ নামে একজনকে। পরে রতনপুর, ফরাক্কা থেকে ধরা পড়ে আরও তিন জন। বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে শমসেরগঞ্জে ধরপাকড় শুরু হতেই ধুলিয়ান শহরেরই গাজিনগর এলাকায় একটি আমবাগানের মধ্যে মেলে প্রচুর বিস্ফোরক। খবর পাওয়া মাত্র সেদিন শমসেরগঞ্জ থানায় ছুটে এসেছিল এনআইএ-র দু’জন কর্তা।
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এক পদস্থ কর্তার মতে, মুর্শিদাবাদ এত বেশি ঘনবসতির জেলা বলে সেখানে লুকিয়ে থাকার সুবিধে বেশি। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার ৫টির মধ্যে ৪টি থানা জুড়েই একদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত, অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড। স্বভাবতই ভিন রাজ্যে যাওয়া এবং সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে গা ঢাকা দেওয়া সহজ। ভিন্ রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে সহজেই মুর্শিদাবাদে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র আনাও সুবিধে।