প্রতীকী চিত্র।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি? না কি বিজেপির তদন্ত কমিটি? সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ভোট পরবর্তী হিংসার মামলার শুনানিতে এই প্রশ্ন তুলল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি পাঠিয়েছিল, তাতে অন্তত দু’জন বিজেপির সঙ্গে জড়িত বলে আগেই তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছিল। কমিশনের রিপোর্টের পরে কলকাতা হাই কোর্ট বিধানসভা ভোটের পরে খুন-ধর্ষণের অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। রাজ্য সরকার তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেছিল। আজ বিচারপতি বিনীত সরন ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর বেঞ্চে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল কমিশনের কমিটির সদস্যদের পরিচয় তুলে ধরে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা কল্পনা করতে পারেন, এই সব ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে! এটা কি বিজেপির তদন্ত কমিটি?’’
রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় জানিয়েছিল, সিবিআই ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত করবে বলে আশা করা যায় না। কারণ, সিবিআই এমনিতেই কেন্দ্রের কথামতো তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা সাজাতে ব্যস্ত। কলকাতা হাই কোর্টের রায়কেও ‘যুক্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে রাজ্যের দাবি ছিল, যে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, সেই রিপোর্ট নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ, রিপোর্টে কী লেখা হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।
কমিশনের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির দু’জনের সঙ্গে বিজেপি-আরএসএসের যোগ থাকার অভিযোগ উঠেছিল। এক জন আরএসএস, সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন ও অর্থনৈতিক সংগঠনে কাজ করেছেন। এখন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনে নিযুক্ত। অন্য জন অতীতে গুজরাতে বিজেপির মহিলা মোর্চা ও বিজেপির ‘বেটি বচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পে কাজ করেছেন। এখন তিনি জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য।
সিব্বল এই প্রসঙ্গ তোলার পরে বিচারপতি বসু প্রশ্ন করেন, ‘‘যদি কারও রাজনৈতিক অতীত থাকে, তা হলে এখনও তাঁরা পক্ষপাতদুষ্ট, এটা কি বলা যায়?’’ সিব্বল বলেন, ‘‘ওঁরা এখনও বিজেপির সঙ্গে যুক্ত পদে রয়েছেন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কি এ রকম সদস্যদের নিয়োগ করতে পারেন?’ কমিশনের কমিটি কী ভাবে তথ্য সংগ্রহ করবে, তা-ও কলকাতা হাই কোর্ট ঠিক করে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন সিব্বল। হাই কোর্টে অনিন্দ্য সুন্দর দাস নামে যে আইনজীবী হিংসার অভিযোগের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, তিনি আগেভাগেই সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট করে রেখেছিলেন, যাতে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বক্তব্য না শুনে একতরফা নির্দেশ না দেয়। তাঁর হয়ে আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি শুনানিতে হাজির ছিলেন। বিচারপতিরা দু’পক্ষকেই এ বিষয়ে তালিকা জমা দিতে বলেন।
তবে রাজ্য সরকার আজ সুপ্রিম কোর্টে অন্তর্বর্তী নির্দেশের আর্জি জানালেও, সর্বোচ্চ আদালত তাতে কান দেয়নি। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি হতে পারে।