সাগরদ্বীপে জনসমাগম, পর্যটন যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে থার্মোকল, প্লাস্টিকের দূষণও। কিন্তু মকর সংক্রান্তিতে সাগরমেলার সময়ে প্লাস্টিক ঠেকানোর ব্যাপারে এ বার আশাবাদী নয় রাজ্য প্রশাসন।
তবে তার ক’দিন পরে মাঘী পূর্ণিমার সময় প্লাস্টিক রোখার পরিকল্পনা করেছে তারা।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প (ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ)-এর আওতায় সাগরে যাবতীয় জঞ্জাল খতিয়ানের সময়ে মালুম হয়েছে, সমুদ্রে পরিত্যক্ত অন্তত ৮০ শতাংশ আবর্জনাই থার্মোকল, প্লাস্টিকের মতো প্রকৃতিতে জৈব ভাবে মিশে যাওয়ার উপযোগী নয় (নন-বায়োডিগ্রেডেবল)। এই সব বর্জ্যের দূষণই ঘিরে ফেলেছে কপিল মুনির আশ্রম তল্লাট।
সরকারি সূত্রের খবর, মহালয়ার স্নানের সময়ও ভি়ড় হয়। সেই পর্ব মিটতেই কপিল মুনির আশ্রম লাগোয়া ঘাটগুলির সব জঞ্জাল ডাঁই করা হয়েছিল। সাগরদ্বীপের হেলিপ্যাডের কাছেই সদ্য গড়ে উঠেছে জঞ্জাল বাছাইয়ের নয়া চাতাল। গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (জিবিডিএ) সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার দাবি, ‘‘এ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় প্লাস্টিক দূর করা সম্ভব না-হলেও এই চত্বরের প্লাস্টিক নির্ভরতা কমিয়ে পরিস্থিতি পাল্টাতে আমরা চেষ্টা করছি। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় মেলার পরেই হাতে-কলমে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পরিবেশবিদেরা বলছেন, সমুদ্রের সব থেকে বড় বিপদ প্লাস্টিক, থার্মোকল। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন সাগর ও মহাসাগরে ৮ কোটি টন প্লাস্টিক ভেসে বে়ড়াচ্ছে। পরিবেশ রক্ষা নিয়ে কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা অংশুমান দাসের কথায়, ‘‘উপকূল-সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও দূষণ রুখতে সাগরদ্বীপ প্লাস্টিকমুক্ত করতেই হবে।’’
প্রশাসনের খবর, কপিল মুনির আশ্রম লাগোয়া পুজোর ডালা বিক্রির ২০০টি দোকানকে নিয়ন্ত্রণ করাই প্রাথমিক কর্তব্য। জিবিডিএ-র কার্যনির্বাহী আধিকারিক জয়ন্ত মণ্ডলের কথায়, ‘‘এ রাজ্যের ভক্তেরা বেশি আসেন মাঘী পূর্ণিমাতেই। পুজোর ডালা বিক্রির দোকানগুলিকে ওই সময়ে কাগজ ও কাপড়ের শক্তপোক্ত ঠোঙা সরবরাহের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, ওই দোকানগুলিতে সরবরাহের জন্য স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, নরেন্দ্রপুরে রামকৃষ্ণ মিশনের আশ্রমে পাঁচ কেজির সামগ্রী বইতে পারে এমন ঠোঙাও তৈরি করানো হচ্ছে। তা ছাড়া, গঙ্গাসাগর মেলার পরই ফের জঞ্জালের ‘সার্ভে’ করা হবে। সরকারি কর্তাদের আশা, প্রশাসনের তরফে প্রথমে কিছুটা পথ দেখানো হলে প্লাস্টিক-নির্ভরতা কমতে পারে।