ছবি: পিটিআই।
করোনার প্রাথমিক পর্বে বিদেশাগত যে-তরুণকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছিল, তিনি এক আমলার ছেলে। লন্ডন থেকে ২০ ডিসেম্বর সরাসরি উড়ানে কলকাতায় আসা এক যুবকের দেহে করোনার নতুন স্ট্রেন মেলায় হইচই চলছে। ওই যুবকের মা আবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্ত্রী।
ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়া নতুন স্ট্রেনের সন্ধান কলকাতায় এই প্রথম মিলল বলে জানান স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। ভারতের কিছু শহরে ছড়াতে শুরু করেছে এই স্ট্রেন। তবে তা নিয়ে আতঙ্কের বিশেষ কিছু নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। যদিও করোনার নতুন এই স্ট্রেনের খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাই চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
করোনার সূচনায় বিলেতফেরত তরুণ গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। তবে ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় নামার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লন্ডন থেকে আসা যুবকের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাঁর সংক্রমণ ধরা পড়ে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তিনি ২০ তারিখ থেকেই হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। কলকাতা বিমানবন্দরে ব্রিটেন থেকে আসা ওই যুবক-সহ সাত জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পাঠানো হয়েছিল কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সে (এনআইবিএমজি)। ওই যুবক ছাড়া অন্য ছ’জনের নমুনায় বিলেতের স্ট্রেন মেলেনি। ওই যুবকের বিষয়ে নিশ্চিত হতে নমুনাটি পাঠানো হয় ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোলে (এনসিডিসি)। সেখান থেকে মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়, ওই যুবকের নমুনায় ব্রিটেনের কোভিড স্ট্রেন রয়েছে। হাসপাতালের খবর, ওই যুবকের কোনও উপসর্গ নেই। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। ১১ দিন কেটে গিয়েছে। আর কয়েক দিন দেখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এয়ার ইন্ডিয়ার কাছ থেকে তালিকার বাকি যাত্রীদের নমুনাও এনআইবিএমজি এবং স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হচ্ছে জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য।
আরও পড়ুন: নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত বেড়ে ২০, তালিকায় ব্রিটেনফেরত ২ বছরের শিশুও
আরও পড়ুন: বাড়ল নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিমান সংযোগ বন্ধ ব্রিটেনের সঙ্গে
তবে ২০ ডিসেম্বর ওই যুবকের সঙ্গে কারা একই বিমানে কলকাতায় এসেছিলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে ফের তা জানতে চেয়ে রাজ্য সরকার। উড়ান সংস্থা জানিয়েছে ওই যুবকের সব সহযাত্রী ফোন নম্বর ও ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য বুধবার দুপুরেই দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে। স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার ওই উড়ান লন্ডন থেকে সরাসরি কলকাতায় আসছিল সপ্তাহে এক দিন। ইংল্যান্ডে নতুন স্ট্রেন দেখা দেওয়ায় ২০ ডিসেম্বরের পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ২০ তারিখের উড়ানে কলকাতায় আসেন ২২২ জন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনের সঙ্গে করোনা রিপোর্ট ছিল না। তাঁদের বিমানবন্দরে আলাদা রেখে পরীক্ষা করানো হয়। দু’জনের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তাঁদের মধ্যে আছেন মেডিক্যালে ভর্তি যুবকও। সংক্রমিত অন্য যুবকও কলকাতার বাসিন্দা।
ওই দু’জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়ার পরে রাজ্য সরকার তৎক্ষণাৎ এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য যাত্রীদের তথ্য চায়। এ দিন নতুন স্ট্রেন পাওয়ার পরে আবার সেই তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের খবর, নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত যুবক সে-দিন ‘২৮ জে’ আসনে বসে লন্ডন থেকে কলকাতায় আসেন। তাঁর আশেপাশে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে সর্বাগ্রে যোগাযোগ করতে চায় রাজ্য। তা ছাড়া, সেই উড়ানের পাইলট-বিমানসেবিকাদেরও সংক্রমণের প্রশ্ন উঠেছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক উড়ান থেকে নামার পরে সেবিকা ও পাইলটদের নিভৃতবাসে রেখে পাঁচ দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। সেখানে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে মোট সাত দিন পরে তাঁরা কাজে ফিরতে পারছেন। তবে সে-দিনের উড়ানের সেবিকা ও পাইলটদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, উড়ান সংস্থা তা জানাতে চায়নি।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)