হাল্কা ব্যাগের বার্তা সব স্কুলে

স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী/ আমরা কি আর বইতে পারি?/ এও কি একটা শাস্তি নয়? —নব্বইয়ের দশকে এমন একটা গান শুনেছিল বাঙালি।মুশকিলটা যে শুধু বাংলার নয়, বরং গোটা দেশের, সেটাই সামনে এসেছে জাতীয় শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশনের (এনসিপিসিআর) একটি সুপারিশে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৮
Share:

স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী/ আমরা কি আর বইতে পারি?/ এও কি একটা শাস্তি নয়? —নব্বইয়ের দশকে এমন একটা গান শুনেছিল বাঙালি।

Advertisement

মুশকিলটা যে শুধু বাংলার নয়, বরং গোটা দেশের, সেটাই সামনে এসেছে জাতীয় শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশনের (এনসিপিসিআর) একটি সুপারিশে। স্কুলশিক্ষা সচিবকে চিঠি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের একটি সমীক্ষায় স্কুল পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের উপরে ভারী ব্যাগের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকেরাও অনুযোগ করছেন। তাই প্রতিটি রাজ্যকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।

চিঠি পেয়ে রাজ্যের শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশন সব জেলাশাসকদের ব্যবস্থা নিতে বলে। জেলার শিশু সুরক্ষা ইউনিট থেকে ওই সুপারিশ পাঠানো হয় মহকুমাশাসক, সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক ও জেলা স্কুল পর্যবেক্ষকদের। রাজ্যে কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা নজরদারি চালাব। কমিশনে রিপোর্ট দিতে হবে।’’

Advertisement

কী সুপারিশ? চিঠিতে বলা হয়েছে, স্কুলে বইপত্র রাখার লকার রাখা এবং সহায়ক বই কমানো উপায় হিসেবে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। মোদ্দা কথা:

১) স্কুলব্যাগের ওজন পড়ুয়ার ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না।

২) প্রাক্-প্রাথমিকে ছাত্রছাত্রীদের বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ারই দরকার নেই।

৩) অধ্যক্ষ (বা প্রধান শিক্ষক), শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪) নিরাপদে ব্যাগ নেওয়ার কায়দা ছাত্রছাত্রীদের জানাতে হবে।

৫) কোন দিন ক’টি বইখাতা লাগবে তা পড়ুয়াদের আগাম জানাতে হবে।

৬) যে স্কুল এই নিয়ম মানবে না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সরকারি স্কুলে ছাত্রদের বইপত্র রেখে যাওয়ার লকার নেই। রাতারাতি লকার তৈরির সামর্থ্যও নেই। তবে ওই সব স্কুলে ব্যাগের ভার বেসরকারি স্কুলগুলির তুলনায় কম। নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রমাপ্রসাদ রায় বলেন, “আমাদের সিলেবাসে বই কম। ভারী ব্যাগের সমস্যা নেই। তবু যাতে ব্যাগ ভারী না হয়, সে ভাবেই রুটিন করতে বলা হয়েছে।’’ পড়ুয়াদের ঘাড়ে বাড়তি চাপের অভিযোগ বেশি বেসরকারি স্কুলগুলির বিরুদ্ধেই। শক্তিনগর হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ জানার সাড়ে তিন বছরের মেয়ে পড়ে কৃষ্ণনগরের একটি ইংরেজি স্কুলে। তাঁর আক্ষেপ, “এই বয়সে ওদের যা ভারী ব্যাগ বইতে হয়, মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাতে স্নায়ুতে চাপ পড়বে, হাতে-পায়ে যন্ত্রণা এবং নানা রকম সমস্যা হতে পারে। ভবিষ্যতে কর্মক্ষমতাও কমে যাবে।”

কলকাতা বা অন্য বড় শহরের কিছু নামী স্কুল ছাড়া লকার নেই বেশির ভাগ বেসরকারি স্কুলেও। এখন লকার করার সুপারিশ শুনে বাড়তি খরচের কথা তুলে ফি বাড়ানোর ধুয়ো তুলতে শুরু করেছে কিছু স্কুল। তবে বিষয়টা যে হাল্কা ভাবে দেখছে না প্রশাসন। অনন্যা বলেন, “বাচ্চাদের পিঠে ভারী ব্যাগ ঝোলানো বন্ধ করতে হবে।” কড়া হচ্ছে জেলাগুলিও। নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “সুপারিশ সকলকে মানতেই হবে। আমরা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে রিপোর্ট চাইব।” চাইল্ড লাইনের মাধ্যমেও প্রচারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement