নওশাদ সিদ্দিকি ও শওকত মোল্লা। — ফাইল চিত্র।
শান্তিপূর্ণ ভোট হলে ভাঙড়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না শাসকদলকে। নিজের কেন্দ্রে পা দিয়েই হুঙ্কার দিলেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রবিবারই প্রথম নিজের নির্বাচনী এলাকায় গেলেন তিনি। নওশাদের মন্তব্যের জবাব দিয়েছে জোড়াফুল শিবিরও। ভাঙড়ে ‘অনেক ভাল ফল’ হবে বলে আত্মবিশ্বাসী রাজ্যের শাসকদলের নেতারা।
গত ২১ জানুয়ারি আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসে ধর্মতলায় জমায়েত করে আইএসএফ। সেখানে আইএসএফ কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনায় নওশাদ-সহ অনেককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৪২ দিন জেলে থাকার পর গত ২ মার্চ জামিন পান তিনি। মুক্তি পান ৪ তরিখ। রবিবার ভাঙড়ে পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে মাতেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। বিধানসভা ভোটের মতো পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ভাঙড়ে আইএসএফের কর্তৃত্ব বজায় রাখবে বলে আশাবাদী নওশাদ। পঞ্চায়েত নির্বাচন কী ফল হবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে শাসকদলকে নওশাদের হুঁশিয়ারি, ‘‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে শাসককে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’
সম্প্রতি সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে হারের পর সংখ্যালঘু মন বুঝতে সংখ্যালঘু নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে কমিটি তৈরি গড়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নওশাদের মতে, সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের থেকে সরে গিয়েছে আগেই। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘অনেক আগেই সরে গিয়েছিল সংখ্যালঘু ভোট। ২০২১ সালে শুধু এনআরসি এবং সিএএ-র ভয় দেখিয়ে একটা অংশ ভোট ধরে রেখেছিল।’’
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভাঙড়ে বিশেষ নজর রয়েছে তৃণমূলের। শনিবারই ভাঙড়ের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। ভাঙড় বিধানসভার পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লাকে। শনিবারই সেই খবর শুনে নওশাদ জানিয়েছিলেন ভাঙড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হিসাবে তাঁর পছন্দের কথা। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দলের সুপ্রিমো, তিনি দায়িত্ব নিন। না হলে দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক ব্যানার্জি ভাঙড়ের দায়িত্ব নিন।’’ শওকতের হাতে সেই দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে রবিবার নওশাদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শওকত মোল্লার নামে অনেক অভিযোগ আছে। তবে তিনি গণতন্ত্রকে হত্যা করবেন এটা আমি আশা করব না। তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করবেন। তবে যদি কেউ মনে করে প্রশাসনের একটি অংশকে কাজে লাগিয়ে ভাঙড় থেকে আইএসএফকে অগণতান্ত্রিক ভাবে উৎখাত করবে সেটা ভাঙড়ের মানুষ হতে দেবে না।’’
নওশাদের চ্যালেঞ্জের পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। শওকতের ব্যাখ্যা, ‘‘২০২১ সালে ধর্মীর ভাবাবেগ তৈরি করে, উন্নয়নের ফুলঝুরি ছোটাব, এই ধরনের ভাঁওতাবাজি দিয়ে ভাঙড়ের মানুষকে বোকা বানিয়েছিল। কিন্তু ভাঙড়ের মানুষ বিধানসভা নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত কোনও উন্নয়ন পাননি।’’ ভাঙড়ের বিধায়ক নিজের তহবিলের টাকা এখনও খরচ করতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর মতে, ‘‘ভাঙড়ের মানুষ বুঝেছেন, নওশাদকে ভোট দেওয়া কত বড় ঐতিহাসিক ভুল। তাই আমাদের বিশ্বাস, আমরা উন্নয়নকে সামনে রেখে মানুষের কাছে পৌঁছব। আগামী দিনে ভাঙড়ে তৃণমূল অনেক ভাল ফল করবে। সেটা নওশাদরা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে।’’