প্রতীকী ছবি।
দু’বছর আগেকার নির্দেশের অধিকাংশই পালন করেনি রাজ্য সরকার। এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কলকাতা ও হাওড়ার বায়ুদূষণ রোধে নিষ্ক্রিয়তার জন্য রাজ্য সরকারের পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। শুধু তা-ই নয়, এই গাফিলতির জন্য মুখ্যসচিব-সহ সংশ্লিষ্ট আমলাদের জেলে পাঠানো উচিত বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য নাগিন নন্দার ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে জরিমানার টাকা জমা দিতে হবে রাজ্যকে। অন্যথায় প্রতি মাসে বাড়তি এক কোটি টাকা দিতে হবে। এই নির্দেশ কতটা পালিত হল, সেই বিষয়ে আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে মুখ্যসচিবকে সবিস্তার রিপোর্ট দাখিল করতে বলেছে আদালত।
কলকাতা ও হাওড়ার বাতাস যে মারাত্মক দূষিত, দীর্ঘদিন ধরে তা বলে আসছেন পরিবেশবিদেরা। আদালত নিযুক্ত কমিটির রিপোর্টেও তা উঠে এসেছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সেই কমিটির সুপারিশ মেনেই দু’বছর আগে কিছু নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশের বেশির ভাগই পালন করা হয়নি। এই বিষয়ে আদালত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করলেও তা ঠিকমতো জমা দেওয়া হয়নি। মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত জানান, এ দিন মামলার শুনানিতে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছে, সাত মাস আগে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি। তার পরেই মুখ্যসচিব-সহ সংশ্লিষ্ট আমলাদের জেলে পাঠানো উচিত বলে মন্তব্য করে আদালত। বায়ুদূষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যেখানে উদ্বিগ্ন, সেখানে রাজ্যের এমন মনোভাবে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছে পরিবেশ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ।
কলকাতা-হাওড়ার ভয়াবহ দূষণের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে গাড়ির ধোঁয়া, কংক্রিটের গুঁড়ো। প্রায় এক দশক আগেই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল করতে হবে। কিন্তু পরিবেশ-কর্মীদের অভিযোগ, সেই নির্দেশিকা যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে না। পরিবেশ আদালত এ ব্যাপারে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল। কিন্তু তাদের রিপোর্ট সন্তোষজনক না-হওয়ায় ন্যাশনাল ইনফর্মেশন সেন্টার থেকে রিপোর্ট তলব করে আদালত। সুভাষবাবু জানান, সেই রিপোর্ট অনুযায়ী কলকাতায় বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে প্রায় ৪৪ লক্ষ ২২ হাজার গাড়ি চলে। তার মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ ২৪ হাজার গাড়ির বয়স ১৫ বছর বা তার বেশি। ‘‘কলকাতা যেন পুরনো গাড়ির বৃদ্ধাশ্রম হয়ে উঠেছে,’’ মন্তব্য সুভাষবাবুর।
আদালত এ দিন বলেছে, গাড়ির ধোঁয়ার বিষ রুখতে সরকার কার্যত কোনও পদক্ষেপ করেনি। কলকাতায় সিএনজি-র মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানিও চালু করতে পারেনি তারা। আদালতে দাঁড়িয়ে পরিবহণসচিব এবং রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল নির্দেশ পালনের কথা বললেও বাস্তবে তা হয়নি।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বক্তব্য জানতে পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও তিনি সাড়া দেননি। এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপেরও উত্তর দেননি।