Mamata Banerjee Abhishek Banerjee

মমতা-অভিষেক বৈঠকের পরেও বিতর্ক জারি তৃণমূলে, প্রবীণদের প্রযুক্তি-খোঁচা মারলেন গোস্বামী নারায়ণ

যে গুটিকয়েক নেতা গত শনিবার অভিষেককে ‘বোঝাতে’ গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন নারায়ণ গোস্বামীও। মঙ্গলবার তাঁর বক্তব্য শুনে অনেকেই মনে করছেন, দ্বন্দ্বের আগুন নেভেনি। বরং তাতে আরও ঘৃতাহুতি হল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৩
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নারায়ণ গোস্বামী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সোমবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাদিবসের মঞ্চ হয়ে উঠেছিল দলের অন্দরে নবীন বনাম প্রবীণ রাজনৈতিক কুস্তির আখড়া। তার পরে সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পর অনেকে মনে করেছিলেন, বিতর্ক আপাতত থামল। কারণ, তৃণমূল নেতাংশের একাংশ দাবি করেছিলেন, বৈঠক হয়েছে। এটাই ‘ইতিবাচক’ ঘটনা। দলের নেতারা কেউ কেউ বলেওছিলেন, ‘‘তৃণমূলে এই দু’জনই সব। আমরা কেউ নই। তাই এই দু’জনের বৈঠকটা হওয়া দরকার ছিল। এটাকে ইতিবাচক ভাবেই দেখা উচিত।’’

Advertisement

কিন্তু রাত পোহাতে না পোহাতে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি তথা অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। যিনি দলে অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত। এমনকি, মঙ্গলবার নারায়ণ এমনও দাবি করেছেন যে, সোমবার মমতার সঙ্গে অভিষেকের বৈঠকে কোনও ‘রাজনৈতিক বিষয়’ ছিল না। মমতা অসুস্থ। তাই অভিষেক পিসির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। যা কানে লেগেছে অনেকের! কারণ, রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের অসুস্থতার কথা সাধারণত প্রকাশ্যে বলেন না। এটা ঠিক যে গত সেপ্টেম্বর মাসে স্পেন সফরে মমতার পায়ে নতুন করে আঘাত লেগেছিল। তার পর তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচারও হয়। গত শনিবার মমতার কাঁধে ফের একটি ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কখনওই নিজেকে ‘অসুস্থ’ মনে করেননি। তেমন কিছু বলেনওনি। ফলে নারায়ণের এই মন্তব্য তৃণমূলের ভিতর কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার হাবরার একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ। সেখানেই তাঁকে দলের অন্দরে উদ্ভূত বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিতর্ক থাকার কথা নয়। নেত্রী আমাদের এক জনই, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ এর পরেই তিনি সিপিএমের উপমা দিয়ে নারায়ণ বলেন, ‘‘সিপিএমে একটা ধারণা আছে— দেহত্যাগ না করলে পদত্যাগ করে না। তার মানে বয়সের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনাকে রাজনৈতিক দলও চালাতে হবে। অনেকে আছেন, যাঁদের সফ্‌টঅয়্যার আপডেটেড নেই। অনেক পুরনো সফ্‌টঅয়্যার। সেটা দিয়ে তো আর হোয়াটস্অ্যাপ চলবে না!’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, এর আগে সিপিএমে ‘বৃদ্ধতন্ত্রের’ কথা উল্লেখ করে একই উদাহরণ দিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। যিনি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাদিবসে প্রবীণদের উদ্দেশে একের পর এক বাক্যবাণ ছুড়ে গিয়েছেন। নবীন-প্রবীণ বিতর্কে কুণালেরই কথার ‘প্রতিধ্বনি’ শোনা গেল নারায়ণের কণ্ঠে।

তৃণমূলের প্রবীণদের কি তা হলে সফ্‌টঅয়্যার আপডেট করা প্রয়োজন? জবাবে ‘নবীন’ নারায়ণ বলেন, ‘‘তা নয়। তাঁরা দলে থাকবেন। আমাদের অন্য দল থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। একটা ইয়ং ছেলে যা করতে পারে, এক জন ৮০-৮৫ বছরের বৃদ্ধের পক্ষে তা সম্ভব নয়। প্রবীণ যাঁরা আছেন, তাঁরা পরামর্শ দেবেন। তাঁদের সেই গঠনমূলক পরামর্শ নিয়েই তো যুব সম্প্রদায় এগিয়ে চলবে। এটাই তো পার্টি।’’ নারায়ণের ব্যাখ্যা, তরুণদের মধ্যে উদ্যম বেশি। তাঁর বক্তব্য, একটা সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা বাংলা চষে বেড়াতেন। তার পর অভিষেককে দেখা গেল ৫৫ দিন ধরে ‘নবজোয়ার যাত্রা’ করলেন। মমতার পর অভিষেক ছাড়া কাউকে সেই পরিশ্রম করতে দেখা যায়নি বলেও দাবি নারায়ণের।

উল্লেখ্য, অভিষেক প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, তিনি মনে করেন সব পেশার মতো রাজনীতিতেও অবসরের বয়স হওয়া উচিত। তা হওয়া উচিত ৬৫ বছর। তবে অভিষেক এ-ও মনে করেন যে, দলে প্রবীণদের পরামর্শ প্রয়োজন। নারায়ণও ‘সেনাপতি’র কথাই ব্যাখ্যা করেছেন। তবে অন্য আঙ্গিকে। গত কয়েক মাস ধরে অভিষেক যে ভাবে মূলধারার রাজনীতি ও দলীয় কর্মসূচি থেকে খানিকটা দূরে দূরে থাকছেন, তা চোখে পড়ছে। গত শনিবার তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ নেতারাই (তার মধ্যে ছিলেন নারায়ণও) তাঁর কাছে ‘সক্রিয়’ হওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেন, লোকসভা ভোটে তিনি কোনও ভাবেই দলের নীতিনির্ধারণ ও সংগঠন পরিচালনার কাজে থাকবেন না। তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন তাঁর নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারেই। তার পরে প্রতিষ্ঠাদিবসে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী অভিষেকের ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা মন্তব্য করে বসেন। বক্লীকে আবার আক্রমণ করেন কুণাল ঘোষ।

দিনভর দু’পক্ষে বিবৃতির লড়াই চলার পরে সন্ধ্যায় অভিষেক যান মমতার বাড়িতে। তখন থেকেই তৃণমূলের অন্দরে বড় অংশের আশা ছিল, বিষয়টি মিটমাট হয়ে যাবে। কিন্তু সেই বৈঠকের পর ২৪ ঘন্টা কাটতে না-কাটতেই নারায়ণের বক্তব্য! যা শুনে তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছে, দ্বন্দ্বের আগুন নেভেনি। বরং তাতে আরও ঘৃতাহুতি হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement