ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জামিন মঞ্জুর। —নিজস্ব চিত্র।
সকালে গ্রেফতার। সন্ধ্যায় জামিন।
নারদ-কাণ্ডে আদালতে জোর ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। সোমবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার পুরপ্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। সোমবার দিনভর শুনানির পর, ধৃত ৪ জনেরই অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছে বিশেষ সিবিআই আদালত। বিচারক অনুপম মুখোপাধ্যায় ৪ জনেরই অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছেন। ৫০ হাজার টাকার বন্ডে তাঁদের জামিন দেওয়া হয়েছে। আদালতের এই নির্দেশে স্বস্তি তৃণমূল শিবিরে। তবে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যেতে পারে সিবিআই। সোমবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে এই শুনানি চলে। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভার্চুয়াল শুনানির আয়োজন করা হয়েছিল।
আদালতে ধৃতদের পক্ষে সওয়াল করেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নারদ-কাণ্ডে বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়কে কেন গ্রেফতার করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি ধৃত ৪ জনের জামিনের আবেদন করেন। যদিও তার বিরোধিতা করে সিবিআই। সিবিআই পক্ষের আইনজীবী ধৃতদের জেল হেফাজতে রাখার আর্জি জানায়। সিবিআই পক্ষের আইনজীবী যুক্তি দেখান, ধৃতরা বাইরে বেরিয়ে প্রমাণ নষ্ট করে দিতে পারেন। ধৃতদের আইনজীবীরা পাল্টা যুক্তি দেখান, ফিরহাদ কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান। সাম্প্রতিক কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাঁকে প্রয়োজন। অন্য দিকে ম্যাথু স্যামুয়েলের স্টিং অপারেশন নিয়েই প্রশ্ন তোলেন শোভনের আইনজীবী। তবে বিচারক সিবিআইয়ের তোলা প্রভাবশালী তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছে। শুনানির শেষলগ্নে আদালতে চার্জশিটও জমা দেয় সিবিআই।
গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি ছাড়া মন্ত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের কী ভাবে গ্রেফতার করা হল, আদালতে সোমবার সেই প্রশ্নও তোলেন কল্যাণ। গ্রেফতারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কল্যাণের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল যা করেছেন পিছনের দরজা দিয়ে করেছেন।’’ কোভিড পরিস্থিতিতে গ্রেফতার নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথাও তুলে ধরা হয় আদালতে।
আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘ন্যায়বিচার হল। আমরা আনন্দিত। আমরা আইনের রাস্তায় লড়েছি। সিবিআই যা বলেছিল সব বাজে কথা।’’
সোমবার দলীয় নেতাদের গ্রেফতারের খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চলে যান নিজাম প্যালেসে। ওই ৪ জনের গ্রেফতারকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দেন তিনি। সেই সঙ্গে এ-ও বলেন, যত ক্ষণ না পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তিনিও নিজাম প্যালেস ছাড়বেন না। নিজাম প্যালেসে জড়ো হন বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকও। অশান্তি ছড়ায় নিজাম প্যালেসে। সিবিআই অফিস লক্ষ্য করে ভিড় থেকে পাথরও ছোড়া হয়। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির আয়োজন করা হয়েছিল।