হোগলবেড়িয়া থানার পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া হয়েছে বলে দাবি। প্রতীকী ছবি।
বাংলাদেশে মাদক পাচারের জন্য স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়িতে কয়েক জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী লুকিয়ে রয়েছেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নদিয়ার হোগলবেড়িয়ায় অভিযানে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে ওই থানার আধিকারিক-সহ পুলিশকর্মীদের। তাঁদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি-সহ বাঁশ, লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। এমনই দাবি করল হোগলবেড়িয়ার থানার পুলিশ। তাঁদের আরও দাবি, সোমবার বিকেলে এই ঘটনায় জখম হয়েছেন ওসি-সহ ৫ পুলিশকর্মী। যদিও স্থানীয়দের পাল্টা দাবি, মহিলাদের শ্লীলতাহানি করেছে পুলিশ। কালীগঞ্জের পর এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে হোগলবেড়িয়ায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দিন কয়েক আগেই কালীগঞ্জে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছিল।
পুলিশের দাবি, মধুগড়ির বাসিন্দা রাবজেল মণ্ডলের বাড়িতে বেশ কয়েক জন বাংলাদেশি আত্মগোপন করে ছিলেন। কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচারের জন্য রাবজেলের বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ মাদকদ্রব্যও মজুত রয়েছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ রাবজেলের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যান হোগলবেড়িয়া থানার ওসি অনিমেষ দে-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। তবে পুলিশ আসার খবর পেয়েই এলাকা থেকে গা-ঢাকা দেযন রাবজেল-সহ তাঁর বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা। তল্লাশি চালাতে গেলে পুলিশকর্মীদের বাধা দেন ওই বাড়ির চুমকি খাতুন এবং সারজিনা বিবি। তা নিয়ে শুরু হয় বচসা। বচসা চলাকালীন ওই পরিবারের বেশ কয়েক জন সদস্য জড়ো হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করে। বাধা দিতে গেলে লোহার রড, হাঁসুয়া-সহ একাধিক ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে স্থানীয়েরা। জনতার আক্রমণে গুরুতর চোট পান বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। আহতদের করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর বেলা সাড়ে ৫টা নাগাদ অভিযুক্তের বাড়ি ঘিরে ফেলে তল্লাশি শুরু করে হোগলবেড়িয়া থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী। আবার বাধার সম্মুখীন হতে হয় পুলিশকে। জনতা-পুলিশের খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর ইট, ধারালো অস্ত্র, লোহার রড, বাঁশ এবং দু’টি ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তেহট্ট মহকুমার পুলিশ আধিকারিক শুভতোষ সরকার বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে নিশ্চিত খবর ছিল, অভিযুক্তের বাড়িতে আত্মগোপন করে রয়েছে বেশ কয়েক জন বাংলাদেশি দুষ্কৃতী। সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে মাদক পাচারের ছক কষেছিল তারা। তল্লাশিতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি, লোহার রড, হাঁসুয়া, বাঁশ, লাঠি দিয়ে আক্রমণ করা হয়। এই ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা মারধরের অভিযোগে করিমপুর সার্কল ইন্সপেক্টর এবং কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের এক মহিলা। এ নিয়ে গ্রামে যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট।
রাবজেলের আত্মীয় আলমগির মণ্ডলের দাবি, ‘‘তল্লাশির সময় বাড়িতে কোনও পুরুষ সদস্য ছিলেন না। ওয়ারেন্ট ছাড়াই বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের মারধর করে শ্লীলতাহানি করেছে পুলিশ। আমরা এই অভিযোগ জানিয়ে সিআইয়ের কাছে লিখিত জমা দিয়েছি।’’