বিক্ষোভ চলছে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল কর্মী কামাল শেখ খুনে ২ জন অভিযুক্ত আদালতে হাজির না হওয়ায় বুধবারও ওই মামলার চার্জ গঠন হল না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযুক্ত আদালতে হাজির না হওয়ায় বছর খানকের মধ্যে টানা ৭ বার ওই মামলার চার্জ গঠনের দিন পিছলো। অবশেষে সরকার পক্ষের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিকির আর্জি মেনে এ দিন গরহাজির থাকা দুই অভিযুক্ত রতন হাজরা ও উৎপল হাজরার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন মুর্শিদাবাদ জেলা ও দায়রা বিচারক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস। তিনি তাঁর আদেশে পুলিশকে বলন, “রতন হাজরা ও উৎপল হাজরাকেগ্রেফতার করে আগামী ৩০ অক্টোবর আদালতে হাজির করতে হবে।” ৩০ অক্টোবর কামাল শেখ খুনের মামলার চার্জ গঠনের পরবর্তী দিন ধার্য করেন বিচারক। এ দিন আদালতে ওই মামলার ১০ অভিযুক্তের মধ্যে অধীর-সহ মোট ৭ জন হাজির ছিলেন। লোচন বাগদি নামে এক অভিযুক্ত ফেরার ও বাকি ২ জন গরহাজির।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই মামলার চার্জ গঠনের দিন ছিল। ওই দিনও রতন হাজরা ও উৎপল হাজরা আদালতে হাজির হয়নি। এ দিনও ওই দু’ জন গরহাজির। কেন গরহাজির সে ব্যাপারে কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তাঁদের আইনজীবী নীলাব্জ দত্ত। তিনি বলেন, “ওই দুই মক্কেল কেন এ দিন আদালতে হাজির হয়নি তা আমিও জানিনা।” তবে এ দিন দুপুরে ওই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সাংসদ অধীর চৌধুরী এজলাসে হাজির হন। তাঁর হাজিরার কয়েক মিনিট আগে থেকে কামাল শেখের পারিবারের লোকজনের বিক্ষোভ মিছিলে আদালত চত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। এ দিন দুপুরে কামাল শেখের স্ত্রী নীলা হামিদ, কামালের ভাই জালাল শেখ ও ভাইপো মোহনলাল শেখের নেতৃত্বে শতাধিক মহিলার প্রতিবাদ মিছিল পৌঁছয় এজলাসের দোরগোড়ায়।
কামালের ভাই ও ভাইপো জালাল ও মোহনলাল তৃণমূলের জেলা নেতা। মিছিল থেকে তাঁরা স্লোগান তোলেন, “কার স্বার্থে কামাল খুনের মামলার চার্জ গঠন করা হচ্ছে না অধীর চৌধুরী জবাব দাও! জজ সাহেব জবাব দাও।” একটু পরেই তাঁদের সামনে দিয়ে অধীর চৌধুরী এজলাসে ঢোকা। তখন অধীর-অনুগামীরও স্লোগান তোলেন। যুযুধান দু’ পক্ষের স্লোগানে ক্ষণিকের জন্য এজলাসের সামনের করিডর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বহরমপুর থানার আই সি অরুনাভ দাসের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী দু’ পক্ষের মাঝে ব্যারিকেড গড়ে অবস্থা সামাল দেন। মিনিট তিনেক পরেই ফের কামালের পক্ষের লোকজন মিছিল করে এজলাসের সামনে করিডরে পৌঁছে যায়।
কামালের স্ত্রী নীলা হামিদের জিজ্ঞাসা, “এজলাসে অন্য আসামিরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। অথচ অধীর চৌধুীরকে কেন বাসার জন্য চেয়ার দেওয়া হয়েছে? এত দিন এজলাসে নানা অছিলায় অধীর নিজের গরহাজির ছিল। এখন অন্যদের গরহাজির করিয়ে চার্চসিট জমা পড়ার পর এক বছর ধরে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বত করছে। এই এজলাসের প্রতি আমাদের আস্থা হারাচ্ছে। তাই অন্য আদালতে এই মামলা স্থানান্তরিত করার কথা ভাবছি।” অধীর চৌধুরী বলনে, “আমিও চাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। এ কথা আমি গত ১১ সেপ্টেম্বরই বলেছি।” ২০১১ সালের ১৫ মে ভ’র সন্ধ্যায় বহরমপুর শহরের মোহনের মোড়ে কামাল শেখ খুন হয়। ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সি জে এম আদালতে ওই মামলায় চার্জসিট জমা পড়ে।